সিলেট নগরের সোবাহানীঘাটে বিএনপির মিছিলে হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে মামলাটি করেন সাজন আহমদ সাজু নামের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী।
এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ আগস্ট দুপুরে সোবহানীঘাট এলাকায় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে অন্য আসামিরা গুলি বর্ষণ ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ছাত্রজনতা ও পথচারী মারাত্মভাবে আহত হয়। বাদী নিজেও মুখে ও চোখে গুলিবিদ্ধ হন এবং এখনও তার শরীরে স্প্লিন্টারের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
আদালত পুলিশেকে এজাহার এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান চৌধুরী।
মামলায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই থেকে পথে নামে শিক্ষার্থীরা। সে মাসের মাঝামাঝিতে গিয়ে আন্দোলন নতুন গতি পায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করতে হয় তৎকালীন সরকারকে। জারি করা হয় কারফিউ, বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট।
তীব্র এই আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী মামলার আসামিরা হলেন-সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান, গোয়েন্দা বিভাগের উপ কমিশনার তাহিয়াত আহমদ চৌধুরী, সিআরটি বিভাগের প্রধান শাহরিয়ার আল মামুন, অতিরিক্ত উপ কমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীর, এসআই পলাশ চন্দ্র দাস, উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, এসআই সাইদুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, সিসিক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, অব্যাহতি প্রাপ্ত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকার।
এছাড়া সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি, বদরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ শোভন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠু, এসআই শামীম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দিলোয়ার হোসেন রাহি, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রচার সম্পাদক ফরহাদসহ মোট ৫৭ জন।
এর আগে সোমবার একই আদালতে সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন নিহতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। এসব মামলায়ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক তিন সংসদ সদস্য, মেয়র, মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ও আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করা হয়।
এছাড়া রুদ্র সেন হত্যা মামলায় শাবিপ্রবির সদ্য পদত্যাগী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনসহ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা একাধিক শিক্ষককেও আসামি করা হয়।