Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলায় গুমের বিবরণ

গ্রাফিতি
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে গুম-খুনের প্রতিবাদ স্থান পেয়েছে গ্রাফিতিতেও। ছবি : জীবন আমীর
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এবারের মামলাটি হয়েছে গুমের অভিযোগ, এটি করেছেন এক আইনজীবী।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি হয়েছিল হত্যার অভিযোগে।

তার একদিন পর বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে গুমের অভিযোগে মামলা করলেন আইনজীবী সোহেল রানা।  

মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। আসামির তালিকায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পুলিশ প্রধান এ কে মে শহীদুল হক এবং সাবেক র‌্যাবপ্রধান বেনজীর আহমেদের নাম রয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।

২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে র‌্যাবের সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে ছয় মাস অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখার অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়েছে।

ঢাকার মহানগর হাকিম ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে মামলার আবেদন জমা দেন সোহেল রানা।

তিনি জানিয়েছেন, বিচারক তার জবানবন্দি নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশক মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এখন ভারতে রয়েছেন। সরকার পতনের পর মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গ্রেপ্তার হলেও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের অবস্থান এখনও অজানা।

সাবেক পুলিশ প্রধান শহীদুল হক ও বেনজীর আগেই অবসরে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলেই দুর্নীতির তদন্ত শুরুর পর বেনজীর বিদেশে পালিয়ে যান।  

শেখ হাসিনা।

সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে পতিত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

এরপর মঙ্গলবার এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে এক মুদি দোকানি নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে মামলাটি হয়।

গুমের মামলা যিনি করেছেন, সেই সোহেল রানা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার কুরিয়াদি এলাকায় থাকেন। তার বাড়ি দিনাজপুর শহরে। তিনি ঢাকার আদালতে তালিকাভুক্ত একজন আইনজীবী।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে এক বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেলে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে গিয়ে স্মাইল গ্যালারির সামনে থাকার সময় একটি মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল। তারপর দুজনের চোখ বেঁধে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর গাড়িতেই বাদীর জননাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং তার আর্তচিৎকার যেন বাইরে না যায়, সেজন্য উচ্চ শব্দে গান চালিয়ে দেওয়া হয়।

এক পর্যায়ে গাড়ি থামিয়ে বাদীর বন্ধুকে ঘটনা প্রকাশ না করার হুমকি দিয়ে নামিয়ে দিলেও বাদীকে একটি ভবনে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় বলে এজাহারে দাবি করা হয়।

এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী চোখ বেঁধে নির্যাতনের সময় বাদীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি নির্বাচন কমিশনে আগুন দিয়েছেন কি না?

সোহেল রানা বলেছেন, তিনি দিন ধরে অভুক্ত অবস্থায় টানা নির্যাতনে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। তৃতীয় দিনে তাকে অন্য একটি কক্ষে নেওয়া হলে চোখ বাঁধা অবস্থায়ও তিনি বুঝতে পারেন যে ওই কক্ষে আরও বন্দি রয়েছে।

“আটকের শুরু থেকে বাদীর দুই চোখ বাঁধা থাকলেও ওই কক্ষে অন্যান্য বন্দিদের গোঙানি, হাঁচি-কাশিসহ নানা আর্তনাদ শোনার পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের আওয়াজ, ট্রেনের হুইসল ও বিমান চলাচলের আওয়াজ বাদী শুনতে পেতেন। আনুমানিক ১০/০৩/২০২৪ (২০১৫ সালের ১০ মার্চ বোঝাতে চেয়েছেন) বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ধরে আনলে তাকে নির্যাতনের আর্তচিৎকারও শুনতে পান।”

আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার অনেকের খোঁজ আর মেলেনি। বুধবার তাদের অনেক স্বজন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে। ছবি : জীবন আমীর

দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর ২০১৫ সালে বিএনপি হরতাল-অবরোধ শুরুর এক পর্যায়ে ১০ মার্চ দলের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে উত্তরা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। দুই মাস পর তাকে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে পাওয়া যায়। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দুদিন আগেই দেশে ফিরেছেন তিনি।

সোহেল রানা বলেন, বন্দি থাকা অবস্থায় সব সময়ই তার চোখ ও হাত পেছনে নিয়ে বাঁধা থাকত। দিনে একবার বাথরুমে যাওয়ার সময় এবং খাওয়ার সময় শুধু হাত খুলে দেওয়া হতো।

প্রায় পাঁচ মাস পর ওই বছরের ৬ জুন সোহেল রানাসহ আরও কয়েকজন বন্দিকে একটি গাড়িতে তুলে আরেকটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আগের মতো নতুন স্থানটিও তিনি চিনতে পারেননি, তবে দুটি স্থানের দূরত্ব গাড়িতে ৭-৮ ঘণ্টার পথ বলে ধারণা দেন তিনি।

গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাকারী আইনজীবী সোহেল রানা।

নতুন স্থানেও একই ভাবে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায়ই থাকতে হত সোহেল রানাকে। এরপর ওই বছরের ১৩ আগস্ট ভোররাতে তাকে আবার গাড়িতে তোলা হয়। এরপর একটি স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ছেড়ে দেওয়ার সময় আর কখনও রাজনীতি না করার এবং এই ঘটনা প্রকাশ না করতে বলা হয় সোহেল রানাকে। তিনি বলেন, প্রকাশ করলে আবার ধরে নেওয়ার এবং পরিবারসহ গুম করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

যেখানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই স্থানটি কোথায় সোহেল রানা জানতেন না। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটার সময় সড়কে এক বক্তিকে দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, এটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্ত এলাকা।   

পরে ঢাকায় ফিরে বারিধারায় তার শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। এসে জানতে পারেন, তার শোকে তার বাবা মারা গেছেন। তার খোঁজ না পেয়ে তার শ্বশুর থানায় জিডি করেছিলেন, তার স্ত্রী হাইকোর্টে রিট আবেদনও করেছিলেন।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আসামি করার ব্যাখ্যায় সোহেল রানা এজাহারে বলেছেন, তারা স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েমের স্বার্থে গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে।

মামলা দায়েরের পর তিনি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ হাসিনার নির্দেশে আমাকে ছয় মাস তিন দিন গুম করে রাখা হয়। আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চলে। এক সেকেন্ডের জন্য শুতে দেওয়া হয়নি। এত অল্প সময়ে এর বর্ণনা দেওয়া সম্ভবপর না।”

এতদিন মামলা করতে না পারার ব্যাখ্যায় এজাহারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানসহ অন্যদের সম্পৃক্ততা থাকায় তখন মামলা করার ক্ষেত্রে তার প্রাণনাশের হুমকি ছিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত