গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা পূর্বাচলে রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার মোট ছয়টি প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন।
প্লট নেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে প্লটগেুলো বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিটি প্লট নিয়ে আলাদা মামলা করছে।
রবি ও সোমবার চারটি মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার আরও দুটি মামলা হয় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ।
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা দুটি মামলারই আসামি। একটি মামলায় জয়কে আসামি করা হয়েছে।
ফলে ছয়টি মামলায়ই আসামি হলেন শেখ হাসিনা। প্লট নেওয়া বাকিদের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হলো। শেখ রেহানার আরেক মেয়ে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক তার মা ও ভাই-বোনের বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলার আসামি। তিনি প্লট না নিলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্লটগুলো পাইয়ে দিতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার প্লট নিয়ে দুদকের উপ পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের করা মামলায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কর্মকর্তাদেরসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন-রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএএ আনিছুর রহমান মিঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, সাবেক সদস্য মো. শফিউল হক, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, রাজউকের সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী ও রাজউকের সাবেক উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য ২০০৮ সালে রাজউক থেকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। ওই সময়সীমার পর ও নির্ধারিত ফরম ছাড়া কেউ আবেদন করলে তা বিবেচিত হবে না বলে বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল।
কিন্তু শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। যার মাধ্যমে রাজউকের নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেননি বলে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বরাতে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
জয়ের প্লট নিয়ে মামলায় এজাহারে বলা হয়, শেখ হাসিনা তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ও তার ছেলে জয় উভয়ে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছেন।
এ মামলায় জয় এবং শেখ হাসিনাসহ গণপূর্ত ও রাজউকের কর্মকর্তাদেরসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামি হলেন- গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার।
এছাড়া রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএএ আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক কামরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ ও পরিচালক নুরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যসহ অন্য বিরুদ্ধে করা এই মামলাগেুলোতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছাড়ার পর ভারতে রয়েছেন। তার মেয়ে পুতুলও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে ভারতে থেকে কাজ করছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার উপদেষ্টার পদে থাকা জয় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
শেখ রেহানা ৫ আগস্ট বোনের সঙ্গে ভারতে গেলও পরে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তার মেয়ে ওই দেশের মন্ত্রী টিউলিপ লন্ডনে থাকেন। আরেক মেয়ে আজমিনাও রয়েছেন যুক্তরাজ্যে। রাদওয়ান এতদিন দেশে থাকলেও এখন বিদেশে রয়েছেন।