তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে এ মামলা কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি মো. ইকবাল কবীর ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেয়।
আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন জাহেদ ইকবাল, আব্দুল্লাহ আলম নোমান ও ব্যারিস্টার প্রিয়া আহসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান ও মো. আনিছুর রহমান খান।
পরে আইনজীবী সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের আগস্টে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়। একই বছরের অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। নতুন আইনে বলা হয়, আগের আইনের ৫৭ ধারার যে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি, সেই মামলাগুলো আর চলবে না।
“যেহেতু শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে মামলাটি তখন পর্যন্ত তদন্তনাধীন ছিল তাই এ মামলা আর চলতে পারে না। আদালত শুনানি শেষে রুল ও স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।”
আইনজীবী প্রিয়া আহসান চৌধুরী জানান, মামলাটি বাতিল চেয়ে গত আগস্টে আবেদন করা হয়েছিল। শুনানির পর আদালত মামলাটি বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেছেন এবং রুল নিষ্পত্তি না পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ৩ ও ৪ অগাস্ট জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে আসেন শহিদুল আলম।
ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেন। এরপর ৫ অগাস্ট শহিদুল আলমকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার নামে এ মামলা হয়।
প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকার পর ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান শহিদুল আলম। পরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ রুলসহ আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে মামলার তদন্ত কার্যক্রমও স্থগিত করে হাইকোর্ট।
এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৯ সালের ১৯ অগাস্ট সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল রেখে রুলটি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় আড়াই বছর পর ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর রুলটি খারিজ করে এবং তদন্ত কাজের ওপর স্থগিতাদেশ বাতিল করে রায় দেয় হাইকোর্ট।
এরপর মামলার কার্যক্রম বাতিল (কোয়াশমেন্ট) চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন শহিদুল আলম।