Beta
রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

শেখ হাসিনাকে ‘চাপ দিয়ে’ মা-ভাই-বোনের জন্য প্লট নেন টিউলিপ

শেখ রেহানার তিন সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক।
শেখ রেহানার তিন সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক।
[publishpress_authors_box]

পূর্বাচলে প্লট নিয়ে এবার শেখ রেহানা ও তার দুই সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এই মামলাগুলোতে রেহানার আরেক সন্তান যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য ও মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককেও আসামি করা হয়েছে।

প্লট না নিলেও তার বিরুদ্ধে মামলার কারণ হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য হিসাবে তিনি ক্ষমতা ব্যবহার করে তার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে মা-বোন-ভাইয়ের নাম প্লটগুলো লিখিয়ে নিয়েছিলেন।

পূর্বাচলে রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট নেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে।

একটি শেখ হাসিনার নিজের নামে, একটি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে, একটি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে, একটি বোন শেখ রেহানার নামে, একটি রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে ও একটি রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে। শুধু টিউলিপের নামেই কোনও প্লট নেওয়া হয়নি।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্যদের ১০ কাঠার এই ছয়টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন অবসানের পর গত ডিসেম্বরে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। তার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চারটি প্লট নিয়ে মামলা হলো।

রবিবার পুতুলের প্লট নিয়ে প্রথম মামলায় তার সঙ্গে মা শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়। সোমবার আলাদা তিনটি মামলা হয় শেখ রেহানা, রাদওয়ান ও আজমিনার প্লট নিয়ে।

রেহানা, রাদওয়ান ও আজমিনা আলাদা মামলার আসামি। শেখ হাসিনা ও টিউলিপ তিনটি মামলারই আসামি। এখন পর্যন্ত চারটি মামলার সবগুলোতেই শেখ হাসিনা আসামি।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে এই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ এই প্রকল্পে প্লট পাওয়ার আবেদন করার সময় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।

আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। তার মেয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পুতুলও রয়েছেন ভারতে।

শেখ রেহানা বোনের সঙ্গে গত ৫ আগস্ট ভারতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

লন্ডনে কয়েকটি ফ্ল্যাট নিয়ে চাপে আছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

তার মেয়ে টিউলিপ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে চার বার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর গত জুলাই মাসে মন্ত্রী হন। তার বিরুদ্ধে সেখানেও ফ্ল্যাট নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত চলছে।

রেহানার আরেক মেয়ে আজমিনাও যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সেখানে তার একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। রাদওয়ান এতদিন দেশে থাকলেও তিনিও এখন বিদেশে।

বিদেশে থাকা এই সবার বিরুদ্ধে সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাগুলো করা হয় বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তিনি জানান, শেখ রেহানা এবং তার ছেলে রাদওয়ান ও মেয়ে আজমিনার নামে ১০ কাঠা করে ৩০ কাঠার তিনটি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে।

টিউলিপকে আসামি করা নিয়ে দুদকের ডিজি আক্তার বলেন, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেছেন। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে যথেষ্ট প্রমাণাদি মিলেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, টিউলিপ যখন জানতে পারেন যে তার খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের নামে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদের নামে প্লট বরাদ্দ নিচ্ছিলেন, তখন তিনি (টিউলিপ) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একই সঙ্গে তার মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে একই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে তার খালা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় পূর্বাচলের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনটি মামলায় প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির যোগসাজশের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও টিউলিপের পাশাপাশি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের ১৪ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে।

অন্যান্য আসামিরা হলেন- গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন- রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি- চ. দা) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম ও সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম।

এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

এদিকে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে রবিবার করা মামলাটি তদন্ত করে আগামী ১০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর জজ আদালত। সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সোমবার এই নির্দেশ দেন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। গত ২২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।

তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জয় এই দুর্নীতির প্রমাণ দিতে দুদকের প্রতি চ্যালেঞ্জও জানিয়েছেন।

দুর্নীতির পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে নিহতের ঘটনাগুলোর জন্য শেখ হাসিনার বিচারের উদ্যোগও নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণহত্যার অভিযোগের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত