পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদসহ পুলিশের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছে বিএনপি।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে বুধবার মামলার আবেদন করেন। তিনি বর্তমানে বিএনপির পুলিশ ও মামলা সংক্রান্ত দিক দেখভাল করছেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বিষয়টি নিশ্চিত করে সকাল সন্ধ্যাকে জানান, সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি টিম পল্টন থানায় গেছে মামলা করার জন্য।
তিনি জানান, চলতি বছরের জুলাইয়ে পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধারসহ ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেন্টু মিয়া।
সালাহ উদ্দীন খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আপনারা জানেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছে, হয়রানি করেছেন, আমাদেরকে গুম করেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের একটি ঘটনা নিয়ে এসেছি।
“হারুন অর রশিদ, মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার– এরা আমাদের অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের অফিসের সব মালামাল নিয়ে যায়। প্রায় ৪৭ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করেছে। আর তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার মালামাল নষ্ট করেছে। সেই সংক্রান্ত একটা মামলার অভিযোগ আজকে আমরা এখানে এফআইআর জমা দিয়েছি।”
গত ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে আরেকটি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে সালাহ উদ্দীন বলেন, “১৬ জুলাই ডিবির হারুন অর রশিদ ডিএমপির মেহেদি হাসান, বিপ্লব কুমার দাস এরা অস্ত্র তৈরি করার হাতিয়ারসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র, গোলা বারুদ নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্যারের কক্ষে রাখে, তৃতীয় তলায় অবৈধ বোম রাখে। একটা নাটক সাজিয়ে তারা বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
“এই যে তারা (পুলিশ কর্মকর্তারা) অবৈধ অস্ত্র, গোলা বারুদ, বোমা রাখলো, কার্যালয়ের বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভয়ভীতি দেখাল, তার একটি অভিযোগ নিয়ে আমরা এসেছি। আমরা ডিউটি অফিসার এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে ওসি সেন্টু মিয়া অভিযোগগুলো গ্রহণ করেছেন। মামলা নম্বর ১ ও ২ ।”
মামলার বিবাদীরা হলেন– পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা প্রধান) হারুন অর রশিদ, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল আলম, হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম) আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) খন্দকার নুরন্নবী, সনজিত কুমার রায়, যুগ্ম পুলিশ কমিশার (ডিএমপি) বিপ্লব কুমার দাস, মেহেদি হাসান, উপ পুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) তারিক বিন রশিদ, উপ পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল জোন) হায়াতুল ইসলাম খান, এডিসি (সোয়াট টিম) জাহিদুল ইসলাম, এসি (মতিঝিল জোন) গোলাম রুহানী, পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন মিয়া, এসআই (পল্টন মডেল থানা) মিজানুর রহমান।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডাকাতি যাওয়া মালামালের মূল্য ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এতে ক্ষতির পরিমাণ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। এই অভিযোগে পুলিশ প্রধানসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
আরেকটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে ২০/২৫ জন সদস্য নয়া পল্টনের অফিসে প্রবেশ করে এবং বাইরে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা অস্ত্র-গোলা বারুদ, বাঁশের লাঠিশোটা, রড, পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় তছনছ এবং অবৈধ অস্ত্র-সস্ত্র রেখে দেয়। তারা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ মহানগর নেতদের আসামি করে মিথ্যা মামলা করে।
এই অভিযোগ হারুন অর রশিদ ছাড়াও ডিএমপির ১৬ জন কর্মকর্তা নাম দেওয়া হয়। তারা হলেন– উপ পুলিশ কমিশনার মো. মহিদ কবির সেরনিয়াবাত, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. আফসার উদ্দিন খান, সাইফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার এরশাদুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কবির হোসেন চৌধুরী, এসআই মনিরুজ্জামান, নুরুল ইসলাম, ফরমান আলী, এএসআই স্বপন মিয়া, রেজাউল করীম, এরশাদ আলী, রবিউল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ, কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, মেহেদি হাসান মাসুদ।