হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় আসামি হিসেবে নিজের নাম দেখে বিস্মিত সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি মনে করছেন, তার মুখ বন্ধ করতে বা তার কথাবার্তা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই এই মামলা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার খিলগাঁও থানায় হয়েছে মামলাটি। যে বিষয়ে রবিবার সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা বলেছেন জেড আই খান পান্না।
তিনি বলেন, “কেন এই মামলা, কী উদ্দেশ্য আমি বুঝলাম না। আমার মুখ বন্ধ করা, আমার কথাবার্তা বন্ধ করার জন্য কিনা, তাও জানি না।
“কারণ কারও সঙ্গে তো ব্যক্তিগত শত্রুতা নাই। মেরাদিয়া কোথায়, আমি চিনিও না। সেখানে আমার তো কোনও জমি নেই, একটা ইটও নেই। এমনকি সেখানে আমার কোনও আত্মীয়-স্বজনও নেই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলা কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার মেরাদিয়া এলাকায় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলা হয়েছে। গত ১৯ জুলাইয়ের ঘটনায় বৃহস্পতিবার মামলা করেছেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের। তবে রবিবার মামলার খবর গণমাধ্যমে আসে।
এই মামলায় ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৪ নম্বরে রয়েছে জেড আই খান পান্নার নাম। একই মামলার আসামির তালিকায় আছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নামও।
আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে মাঠে ছিলেন জানিয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, “ঘটনা বলা হয়েছে, ১৯ জুলাই। ওইদিন তো ছাত্রদের সঙ্গে আমি আন্দোলন করি, ছাত্ররাও আমার সঙ্গে আন্দোলন করে। ওইদিন সম্ভবত আপিল বিভাগে ছিলাম। সেখানে হয়ত হাতাহাতি মারামারির ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু আমাকে কেন সেখানে ঢোকাল? নিশ্চয় কোনও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে।”
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বেশ সরব ছিলেন জেড আই খান পান্না। ওই সময় শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে জোরালো ভূমিকা রাখেন তিনি।
আন্দোলন চলাকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রধান ছয় সমন্বয়কে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আটক রাখারও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাদের মুক্তি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে হাইকোর্টে হওয়া মামলাতেও আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন।
তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে দেখা যায় তাকে।
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে হওয়া মামলা বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
মামলাটিকে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ উল্লেখ করে আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, “জেড আই খান পান্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতাদের আটকের ঘটনায় আইনি লড়াইয়ে সম্পৃক্ত থেকেছেন।
“নীতি ও আদর্শের জায়গায় তিনি সরব ছিলেন। আসক মনে করে, মানবাধিকার বিষয়ে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট-সংশ্লিষ্ট আলোচনা, মতামত ও বক্তব্য সংক্রান্ত কোনও ভূমিকায় কোনও পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা করা হতে পারে। এ মামলা অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয়।”