উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত টেনেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। পাকিস্তানের নির্বাচনকে সাড়া জাগানো ও অংশগ্রহণমূলক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বিদায়ী কমিটিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “আমি জেনেছি এবার নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রতীক থাকবে না। এটার ভালো দিক আছে। যেহেতু এটা রাষ্ট্রীয় নির্বাচন নয়, এলাকাভিত্তিক নির্বাচন। এখানে মানুষ এলাকার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন, পুরো জাতির জন্য নয়। স্থানীয় সরকার তার নির্ধারিত অঞ্চলে জনশাসন পরিচালনা করে থাকে। তার ক্ষমতা সীমিত থাকে। আমার মনে হয়, এখানে সুযোগটা থাকবে।”
এসময় পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানেন তিনি। বলেন, “এক্ষেত্রে পাকিস্তানের দৃষ্টান্ত এসে যেতে পারে। সেখানেও একটা নির্বাচন হয়েছে; বেশ সাড়া জাগানো নির্বাচন। আমি এর বিশ্লেষণে যাচ্ছি না তবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। প্রতীকসহ, প্রতীক ব্যাতিত বা অনেকগুলো প্রতীকে নির্বাচন হয়েছে।”
পাকিস্তানের এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারেনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ফলে দলটির প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হয়ে বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে ভোট করতে হয়েছে। এই নির্বাচনে ২৬৬টি আসনের মধ্যে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৯৩টি আসনে। যা নওয়াজের দল পিএমএল ও বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপির চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনের বিধান আছে। আবার স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রার্থীরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন। ৪ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত চার ধাপে এই ভোট শেষ করতে চায় কমিশন।
জাতীয় নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা ভোটও বর্জন করেছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও দলীয় প্রতীকে এই ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উপজেলার ভোটকে খাটো করে দেখার কোনও সুযোগ নেই বলে মনে করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “তৃণমূলে নেতৃত্ব যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব খুব শক্তিশালী হয় না।”
এসময় তৃণমূলের সংস্থাগুলোয় নেতৃত্ব সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, গণতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা; তা দেখতে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে বলেন তিনি।
বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বড় বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসিদ্ধ হবে না। নির্বাচন অবৈধও হবে না। তবে নির্বাচনের সার্বজনিনতা খর্ব হতে পারে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা খর্ব হতে পারে। নায্যতা খর্ব হতে পারে।”
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, “যেখানে সমালোচনা করা দরকার সেখানে গণমাধ্যম সমালোচনা করবে। গণমাধ্যম ছাড় দেবে না, এটা গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
“গণমাধ্যমের প্রতি আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা রয়েছে। অতিরঞ্জিত খবরকেও আমি খুব মন্দভাবে দেখি না। অতিরঞ্জিত হলে তাতে কিছু সাহিত্য উপাদান থাকে। একটু অতিরঞ্জন হতে পারে। কিন্তু বিকৃত তথ্য পরিবেশন করা হলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।”
একই জেলায় তিন উপজেলা ভোট তিন পর্বে আয়োজন করার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “এটা মৌলিক সংস্কার না। ব্যবহারিক সংস্কার। ওইভাবে তিনটা পর্বে নির্বাচন করলে দিনাজপুর থেকে চিটাগাংয়ে পুলিশ আসবে না। এটা পরীক্ষামূলকভাবে করা হবে। আমার বিশ্বাস আমি আশা করি এটা নির্বাচনকে সহজ করবে।”