দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব একটা অংশগ্রহণমূলক হয়নি বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার মতে, এই নির্বাচন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকার আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে এক ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ মতামত দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় কমিশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিইসি। ভোটের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দিতেই ছিল এই আয়োজন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশন সচিবলায়ের সব কর্মকর্তা।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনের দায়িত্ব কমিশনের নয় জানিয়ে সিইসি বলেন, “নির্বাচন খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা নয়। নির্বাচন মোটাদাগে সার্বিক রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে একটা রাজনৈতিক সংকট থেকেই যায়। একটা বড় অংশ কেবল ভোট বর্জনই করেনি, তারা প্রতিহতেরও ঘোষণা দিয়েছিল। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্বাচনটা উঠিয়ে আনা হয়েছে। জাতি স্বস্তিবোধ করছে, আমরাও স্বস্তিবোধ করছি।”
সব মিলিয়ে দ্বাদশ ভোট তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে বলে মনে করেন সিইসি।
অনেকেই এই ভোট আয়োজনের সুনাম করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকেই অপমান বলেন বদনাম বলেন, সেটা করেছেন। দুটোকেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নির্বাচনটা সম্পন্ন হয়েছে। একটা চলমান সংকট উদ্বেগ ছিল, উৎকন্ঠা ছিল সেখান থেকে জাতি উঠে এসেছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান বলে আমি মনে করছি না।”
দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই বিতর্কের মধ্যে পড়েছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনকে যে অবৈধ কমিশন বলা হচ্ছিল, সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
নানা শঙ্কা কাটিয়ে ধাপে ধাপে ঠিকই নির্বাচনটি শেষ হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কোনও দর্শন নয়। এটা ইলেকটোরাল বুরোক্রেসি। আমলাতান্ত্রিক কাজ। রাজনীতি থেকে নির্বাচনের জন্ম হয়েছে । নির্বাচন থেকে রাজনীতির জন্ম হয় নাই। নির্বাচন একটি পরিমাপক। যেকোনো গণতন্ত্রে নির্বাচন অনিবার্য। এটা ছাড়া গণতন্ত্র হয় না।”
কোনও নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচন নিয়ে হয়তো বা খুব সন্তুষ্টবোধ করছি আমরা। তবে এটাও বলতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারি নাই। বিতর্কটা আছে কম বেশি।”
নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানান কমিশনার আহসান হাবিব খান।
সামনে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ভোটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা যে স্ট্যান্ডার্ডে পৌছেছি সেই স্ট্যান্ডার্ড থেকে নামতে পারব না। ইমপ্রুভমেন্ট থাকবে। আনলিমিটেড, স্কাই ইজ দ্য লিমিট।”
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হতো বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, “যেগুলো আমাদের কাজ না সেগুলো আমরা করতে যাব না। কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না এলে তাদের জোর করে নির্বাচনে আনা আমাদের কাজ নয়।”
ভোট দেওয়ার আয়োজন করা কত কষ্টের তা কমিশনে যুক্ত হওয়ার আগে বুঝতে পারেননি বলে জানান নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
তিনি বলেন, “আমরা বড় গলায় বলতে পারব, সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি। কিছু ব্যর্থতা যদি থাকে, তবে তা আমাদের। স্বার্থকতাটুকু আপনাদের।”
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, “আপনারা যারা এখানে ছিলেন, খুবই ভালো কাজ করেছেন। বিভিন্ন সময় আমরা আপনাদের নতুন তথ্য দিতে পারিনি, সবসময় দিতে পারতামও না। তারপরেও আপনাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে।”