দ্বাদশ ভোটের ফল নিয়ে কারও মনে সন্দেহ থাকলে তা পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে জাপানি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ পরামর্শ দেন।
ছয় সদস্যের পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্ব দেন ওয়াতানাবে মাসাতো। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
রবিবার দেশের ২৯৯ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ হয়। দিনভর ভোট গ্রহণ শেষে রাতে নির্বাচন ভবনে ফল ঘোষণা শুরু করেছিলেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম। একের পর এক আসনের পূর্ণাঙ্গ ফল পাওয়া যাচ্ছিল তার ঘোষণা থেকে, আসনভিত্তিক ফল নির্বাচন ভবনে বোর্ডে টানিয়েও দেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু সব আসনের ফল ঘোষণা না করেই ভোররাতে নির্বাচন ভবন ছেড়ে যান সচিব। ২৯৮ আসনের ফল ঘোষণা হয়েছে বলেও এসময় দাবি করেন তিনি। তবে তখনও সাংবাদিকরা সব আসনের ফল পাননি। ফলে পূর্ণাঙ্গ ফলের অপেক্ষা শেষ হয়নি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের।
ফলাফল অসম্পূর্ণ রেখে ভবন ছাড়লেন ইসি সচিব
এর আগে ভোটগ্রহণ চলাকালে দুপুর একটা, তিনটা ও বিকাল পাঁচটার দিকে ভোটের হার সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানায় কমিশন।
শুরুতে বলা হয়, বেলা ১২টা পর্যন্ত পর্যন্ত পড়েছে ১৮ শতাংশ। ৩টার দিকে জানানো হয় ২৭ শতাংশ এবং শেষ ব্রিফিংয়ে সিইসি জানান ৪০ শতাংশের কম-বেশি ভোট পড়তে পারে।
সোমবার সিইসি বলেন, দেশের ২৯৮ সংসদীয় আসনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ।
এসময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলা হয়েছিল। পরবর্তী এক ঘণ্টায় এত বেড়ে গেল কীভাবে?
জবাবে সিইসি বলেন, “বিকাল ৩টা নয়, সেটা ছিল দুপুর ২টা পর্যন্ত ফলাফল।”
এর ফল নিয়ে যদি কারও সন্দেহ বা দ্বিধা থাকলে তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, “ইউ ক্যান চ্যালেঞ্জ ইট। এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যে রেজাল্টগুলো এসেছে, যদি মনে করেন যে এটাকে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম, ওটাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। আমাদের অসততা রয়েছে বলে যদি মনে করেন, তাহলে সেটাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।”
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফলাফল আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যখন আমি ২টার সময়ে বলি তখন কোনোভাবেই এটা পুরোপুরি সঠিক হওয়ার কথা নয়। যখন চারটার সময়ে বলি এটা কোনোভাবেই সঠিক হওয়ার কথা নয়। সব চলে আসার পর যখন রাতের ১০টায় বলি, তখন সঠিকটা বলা যাবে। এখন যে রেজাল্টটা দাড়িয়েছে সেটা হলো ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। “
জাপানের পর্যবেক্ষকদের মত
জাপানের পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে সিইসি বলেন, “জাপানের রাষ্ট্রদূত ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল আমাদের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাতে এসেছিলেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা, যেটা কার্টেসি। তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও দেবেন।”
বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের পর তারা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পেশাদারত্বের সুনাম করেছেন বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, “সুশৃংখল পদ্ধতিতে যে নির্বাচন হয়েছে এটার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ওরা সবকিছু সুশৃঙ্খল দেখতে পেয়েছেন। তারা বলছেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য দৃষ্টান্তস্বরুপ।”
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনও নির্বাচনের জন্য যদি আরও সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, সেটাও তারা করতে রাজি বলে জানিয়েছেন।
জাপানের পর্যবেক্ষক দলের প্রধান মাসাতো সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে ঢাকার বেশ কয়েকটি নির্বাচনী কেন্দ্র আমি ঘুরে দেখেছি। আমি তখন তাকে (সিইসি) নির্বাচন নিয়ে আমার ইমপ্রেশন সম্পর্কে জানিয়েছি। নির্বাচন ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান সরকারের কাছে জানাব। জাপান সরকার সেই প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে সরবরাহ করবে।”
নির্বাচন কমিশন ও সরকারের আতিথেয়তার প্রসংশাও করেন তিনি।