Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজিজের ভাই, মোসলেহউদ্দিনের সন্তানদের এনআইডি তদন্তে ইসি

‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই ও বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেহউদ্দিনের সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির তদন্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ।

সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

একইদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের পাসপোর্ট জালিয়াতি খতিয়ে দেখতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে তারা চিঠি দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ (জোসেফ) নিজেদের নামের পাশাপাশি বাবা-মার নামও পরিবর্তন করেছেন।

হারিছ আহমেদ তার নাম পাল্টে হয়েছেন মোহাম্মদ হাসান। তোফায়েল আহমেদ জোসেফ নাম পাল্টে পরিচিতি নিয়েছেন তানভীর আহমেদ তানজীল হিসেবে। অভিযোগ আছে, তাদের এনআইডির তথ্য পরিবর্তনে আজিজ আহমেদ সুপারিশ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিসালদার মোসলেহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মোসলেহউদ্দিনের ছয় সন্তান বাবার নাম পরিবর্তন করে এনআইডি নিয়েছেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনকে এ তথ্য জানিয়ে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে মোসলেহউদ্দিনের ছয় সন্তানের নাম ও এনআইডির নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মাহমুদুল ইসলাম খান, মজিদুল ইসলাম খান, মো. মহিদুল ইসলাম খান, মো. সাজিদুল ইসলাম খান এবং সানাজ খাঁন।

এর মধ্যে শফিকুল, মহিদুল ও সানাজ তাদের পাসপোর্টেও বাবার নাম পরিবর্তন করেছেন। মাহমুদুল ইসলাম তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে বাবার নাম পরিবর্তন করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, “আজিজ সাহেবের ভাই। হারিছ চৌধুরী (খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তার রাজনৈতিক সচিব), বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহউদ্দিনের পরিবার ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি করেছে জেনেছি। ২০-২৫ বছর পর হঠাৎ জানা গেল। এখন দুটো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।”

এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কোনও না কোনও ফাঁক ফোঁকরে অপরাধীরা এটি করছে। আমাদের জালিয়াতির তথ্য দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব। সাবেক সেনাপ্রধান ও বঙ্গবন্ধুর খুনির সন্তানদের জালিয়াতির তথ্য পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করছি। পুরো সিস্টেমের ১ শতাংশ হয়ত এই জালিয়াতিতে যুক্ত, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারের হত্যা করে সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য। তখন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।

পলাতক খুনিদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকার গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ এপ্রিল রাতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পলাতক খুনিদের মধ্যে এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

‘নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট আছে’

নির্বাচন নিয়ে দেশে এখনও রাজনৈতিক সঙ্কট বিরাজ করছে বলে মনে করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সঙ্কট দেশের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলতে পারে। তাই নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং রাজনৈতিকদলগুলোর মধ্যে কতিপর মৌলিক সমঝোতা প্রয়োজন।”

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাঁচ মাস হয়ে গেলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘বিরোধের জমাট বরফ’ গলেনি বলে মনে করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “সার্বিক পরিবেশ এখনও পুরোপুরি অনুকূল হয়ে ওঠেনি। তবুও আমি আশাবাদী সঙ্কট নিরসন হবে। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।”

নির্বাচন ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে আরও সুষ্ঠু হবে- আশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, “উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, এমন অভিযোগ কোনও ভোটার করেনি। দেশের সার্বিক নির্বাচন ব্যবস্থার আরও সংস্কার করা প্রয়োজন। এতে ব্যক্তির গুরুত্ব কমে যাবে, নির্বাচন ব্যবস্থা আরও সুসংহত হবে।”

নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন ও বিধিবিধান প্রয়োগ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা প্রার্থী তাদের দক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততার ওপর নির্ভর করে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে।”

উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একটি বড় রাজনৈতিক দল ভোটে না থাকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হয়নি। তবে এখানে আমাদের করার কিছুই ছিল না।”

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে তা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোকেই সংলাপের মধ্য দিয়ে এর সমাধান করতে হবে।

“পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী দলকে অভিন্দন জানানোর মাধ্যমে একটি সুস্থ নির্বাচনী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আর যারা নির্বাচিত হবেন তারা সেবার মনোভাব নিয়ে জনগণের কাছে গেলে সংস্কৃতিতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন হবে।”

‘পাঁচ ধাপে ভোট পড়েছে ৩৬.৪৫%’

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে করতে হয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে।

দেশের ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে পাঁচ ধাপে ৪৬৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে। আইন জটিলতার কারণে বাকি উপজেলাগুলোর নির্বাচন পরবর্তীতে হবে।  

৪৬৯ উপজেলায় গড়ে ৩৬.৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, “নির্বাচনে অনেকে প্রভাব সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, আমাদের তৎপরতায় সফল হননি।”

উপজেলা নির্বাচন সার্বিকভাবে অহিংস হয়েছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনেকটাই সহিংসতা মুক্ত হয়েছে। অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে সহিংসতার মাত্রা অনেক কম। ভোটে প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে আমরা সজাগ থাকায় এবং মাঠ প্রশাসনের সহায়তায় অহিংস নির্বাচন হয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত