রাত পেরোলেই ভোট। কিন্তু তা শান্তিপূর্ণ হবে কি না, এ নিয়ে ভোটের মাত্র ১৬ ঘণ্টা আগে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির হরতাল, তার আগে ট্রেনে আগুনের প্রেক্ষাপটে শনিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই সংশয়ের কথা বলেন তিনি।
রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। ২৯৯ আসনের সব কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ চলবে সারাদিন।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় এই নির্বাচনেন অংশ না নিয়ে হরতাল ডেকেছে বিএনপি। হরতাগের আগে ট্রেনে আগুনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রেও অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে আসেন সিইসি। সেখানে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা ছিলেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
“যারা হরতাল ডেকেছে, তারা বলেছিলেন তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, শান্তিপূর্ণভাবে তারা ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবেন। আগুন দেখে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত। কোনও দল যদি এটি করে থাকে, তাহলে তা অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি।”
ভোট শান্তিপূর্ণ করতে কমিশন কতটা তৎপর থাকবে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি ভবিষ্যতই বলবে। সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
“তবে বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে ভোট শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনা দুরূহ হবে। আশা করি, ভোটাররা কেন্দ্রে আসবেন।”
ভোটারদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য নিয়োজিত আছে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “বড় দল ভোটবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলছে, এটা অপরাধ। ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।”
নির্বাচন কমিশনকে প্রতিপক্ষ না ভাবার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, “কমিশনের ওপর আস্থা থাকুক বা না থাকুক, দলগুলোর মধ্যে আস্থা থাকা জরুরি।
“কোনও বিশেষজ্ঞ যদি বলেন ১০ বছর নির্বাচন বন্ধ করুন, দলগুলো সমঝোতায় আসলে পরে ভোট করুন। তাহলে আমি নির্বাচন বন্ধ করে দেব।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির বিষয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে। যারা বাধা দেবে, তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবে তারা।
“আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী-তা আমি বুঝি না। এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর।”
পররাষ্ট্র সচিবও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তাও ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন না বলে জানান হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রে সব ক্ষমতার অধিকারী প্রিজাইডিং অফিসার। বারবার তাদেরকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ভোটের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে সিইসি বলেন, “ভোটকেন্দ্রে মিডিয়ার অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে। স্বচ্ছতা তুলে ধরতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।”
বড় একটি দলের অংশগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনের পরিবর্তে ‘সিলেকশন’ হয়ে যাচ্ছে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “অনেকে সিলেকশন বলছেন; শুধু সিলেকশন নয়, আরও অনেক কিছু বলছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না। এ সংকট রাজনৈতিক।”
নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে, সরকার কে হবে তা সবাই জানে-এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে হাবিবুল আউয়াল বিব্রত কি না, অনুষ্ঠানে এই প্রশ্নের সামনেও পড়েন সিইসি।
জবাবে তিনি বলেন, “এটা আমাদের বিষয় নয়। নির্বাচিত হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।”
নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে- এমন প্রশ্নে কিছুটা কৌশলী উত্তর আসে সাবেক আমলা হাবিবুল আউয়ালের।
তিনি বলেন, “কেউ বলবেন ভোট গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) তা দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন। এতে দেশে-বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। গণমাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উঠে আসলে মানুষ ভোটের প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবে।”
“আমরা গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই। স্থানীয়ভাবে কেবল নয়, আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হোক, সেটাই চাই,” বলেন তিনি।