প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩০-৪০ শতাংশ বা এর মাঝামাঝি ভোট পড়েছে বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুমের ব্যস্ততার কথা বলেছেন। তবে ভোটার কম হলেও ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হওয়ায় খুশি নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থার প্রধান।
বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি।
তিনি বলেন, “আমরা যেটা পাচ্ছি ৪০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বা এর মাঝামাঝি থাকতে পারে।”
এত কম ভোটার উপস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “বর্ষাকাল হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি ছিল। ধান কাটার একটা মৌসুম ছিল। আমরা জানার চেষ্টা করেছি, আমাদের বলা হয়েছে অনেকেই ধান কাটায় ব্যস্ত থাকায় তারা ভোট দিতে আসেননি। তা ছাড়া সকালে বেশকিছু জায়গায় ঝড়-বৃষ্টিও হয়েছে।”
এর আগে ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা ভোটে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা ভোটে পড়েছিল ৬১ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে পড়েছিল ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট।
স্থানীয় সরকারের পরিষদ নির্বাচনগুলো সাধারণত বাংলাদেশে বেশ জমজমাট হয়; তবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পার হয়েছে ভোটারের জন্য ‘পথ চেয়ে থাকার’ মধ্য দিয়ে।
সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার জন্য বৃষ্টিকে দুষেছিলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। তাদের আশা ছিল, দুপুরের পর ভোটার সংখ্যা বাড়বে। তবে বেলা বাড়লেও দৃশ্যে পরিবর্তন আসেনি।
অন্য বারের মতো এবারও দেশের ৪৯৫ উপজেলায় কয়েক ধাপে নির্বাচন করছে ইসি। সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল। ভোটারদের কেন্দ্রে না গিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশের আহ্বানও রেখেছে বিএনপি।
এসবের মধ্যেই নির্বাচন জমিয়ে তোলার লক্ষ্যে দলীয় প্রতীক কাউকে না দিয়ে উন্মুক্ত করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে সব উপজেলায় আসলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যেই হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
আবার এমন প্রার্থীও আছেন যারা বিভিন্ন সংসদ সদস্যদের স্বজন, যারা দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়ে জন্ম দিয়েছেন আলোচনার।
এবার ভোট মোটামুটি ভালোভাবে অবাধ নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে জানালেন সিইসি। তিনি বলেন, “কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ এবং আহতের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে সীমিত পর্যায়ে কিছু অনিয়ম হয়েছে যে কারণে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি। দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।”
ভোটে প্রশাসন, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করেছে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল। সে কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিত যথেষ্ট ভালো ছিল বলে মত দিলেন তিনি।
খুবই বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী ৩৪টি ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষগুলো ভোটকেন্দ্রের বাইরে হয়েছে। ২৫ জন আহত হয়েছে, তবে কেন্দ্রের ভেতরে সংঘর্ষ হয়নি।
“১০ হাজার ৩৯৯ কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে দুটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোটামুটিভাবে নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে।”
দেশের নির্বাচন পদ্ধতির প্রসঙ্গ তুলে সিইসি বলেন, এই পদ্ধতিকে বলে মেজোরিটিয়ান সিস্টেম বলে। এখানে দুই শতাংশ ভোট পড়ুক আর ৬০ শতাংশ, যে বেশি ভোট পাবে তাকেই জয়ী ঘোষণা করা হবে।
তবে এক্ষেত্রে ভোটার বেশি এলে সেটা উৎসাহব্যাঞ্জক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভোটার কম হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। আমাদের কাজ হচ্ছে গননা করে যে বেশি ভোট পেয়েছেন তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা।”
৩০-৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ভোটের প্রতি অনাস্থা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “এটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। এটা আমার বিষয় না। আমার বিষয় হলো, ভোট হয়েছে কি না? ভোটাররা আসছে কি না? ভোট দিতে পেরেছেন কি না? কোথায় কী অনিয়ম হলো, গণনার পরে কোনও রকম সংঘাত-সংঘর্ষ যেন না হয়।”
১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন ছয়টি ধাপে ও ২০১৯ সালে পাঁচ ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের ভোট হয়। এবার চার ধাপে ভোট করছে ইসি।