নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রুপালি পর্দার তারকা প্রার্থীরা ততই শশব্যস্ত হয়ে উঠছেন গণসংযোগে। ভোট চাইতে রাজনীতির ভাষা রপ্ত করার দৌড়ে সামিল এই তারকারা নিজের বসন-ভূষণে নজর দিতেও কোনো ছাড় দিচ্ছেন না।
পোশাকে ’দশে দশ’ ফেরদৌস
১৯৯৭ সালে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটেছিল নায়ক ফেরদৌসের; আর ২০২৩ সালে রাজনীতির মঞ্চে নিজের অভিষেক ঘটালেন।
সিনেমার পোস্টারে নয়, ঢাকা ১০ আসন ছেয়ে গেছে ফেরদৌসের নির্বাচনী পোস্টারে। ছয় বোতামের মুজিব কোট গায়ে ফেরদৌস এসেছেন ভোট চাইতে।
তারকাদের সাজপোশাকের ফ্যাশনে ভক্তদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। রাজনীতিক বনে যাওয়া ফেরদৌসও তার ভক্ত ও ভোটারদের এখানে নিরাশ করেননি।
হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমায় মিস্টি প্রেমের সেই সরল নায়ককে হঠাৎ হঠাৎ নয়, রোজই দেখা যাচ্ছে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান থেকে হাজারীবাগের অলিতে-গলিতে।
ফেরদৌসের ব্লু টিক পাওয়া অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ ভরে উঠছে এসব নির্বাচনী প্রচারণার ছবি ও ভিডিও দিয়ে।
মুজিব কোট ছাড়াও পায়জামা ও পাঞ্জাবির সাথে কখনও সাদা, কখনও সবুজ, কখনও মেটে কিংবা সোনালি, আবার কখনও নীল রঙের কোটি চাপিয়ে মঞ্চে বসছেন, মাইকে ভাষণ দিচ্ছেন, দুই আঙ্গুল তুলে ভি চিহ্ন দেখাচ্ছেন তিনি।
শীতের সাথে সাথে রাজনীতির হাওয়াতেও মানানসই শাল বেছে নিয়েছেন ফেরদৌস। ঘি রঙা মোলায়েম জমিনে কালচে খয়েরি সুতায় চিকন নকশা বোনা শাল অথবা মিশমিশে কালো জমিনের পাড়ে সোনালি সুতার কারুকাজ করা শাল গায়ে জড়িয়ে হেঁটে হেঁটে ভোটের পোস্টার বিলি করছেন এই তারকা।
সাদা পায়জামা, কলারে সোনালী কারুহেমের রেশমি সবুজ পাঞ্জাবির সাথে একটু গাঢ় সবুজ রঙের কোটি আর চোখে কালো রোদচশমা পরে ২২ নং ওয়ার্ডে রজনীগন্ধা ফুল বিলিয়ে ভোট চেয়েছেন নৌকার মাঝি ফেরদৌস।
একেকদিনের নির্বাচনী প্রচারণায় ফেরদৌসের পাঞ্জাবিতে এসেছে রঙের আভিজাত্য ও দেশজ চেতনা।
বিজয়ের মাসে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গেছেন কলারে লাল, বোতামের কাপড়ে সবুজ রঙ দেওয়া ঘি রঙের জমিনের পাঞ্জাবি পরে। সাদা-কালো রঙের ডোড়া দাগ দেওয়া পাঞ্জাবি পরে হাত মেলাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষের সাথে।
নীল রঙের পাঞ্জাবি পরে ’ঢাকা দশ হবে দশে দশ’ স্লোগানে ভোটের প্রচারে নামা ফেরদৌসের পোশাকও যেন দশে দশ।
ফুলহাতায় তারিন
নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানের শিশুশিল্পী থেকে বিনোদন জগতের সব মাধ্যমেই দাপটে জায়গা করে নেওয়া তারিন জাহানকে কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সমাবেশ, প্রচারণায় দেখা গেছে। ভারতে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তারকাদের পোশাকে ও সাজে ধ্রুপদী ছাপ দেখা যায়। ফুলস্লিভ ব্লাউজ আর পরিপাটি করে বাঁধা চুলে সামনে আসেন নায়িকারা। এখানে তারিনকেও আওয়ামী লীগের প্রচারণায় দেখা গেল ফুলহাতা ব্লাউজে আর মুখে স্নিগ্ধ প্রসাধনীতে।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সিলেটবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন তারিন। ভোটে নিজে না থাকলেও তারিন রয়েছেন ফেরদৌসের পক্ষে প্রচারণায়। চোখে চশমা, হালকা রঙের কামিজ আর ন্যুড কালার লিপস্টিকে ঘুরে ঘুরে ফেরদৌসের হয়ে ভোট চেয়েছেন তারিন।
হলুদ ট্রাকে হলুদিয়া মাহি
আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা চেয়ে আবেদন করেছিলেন মাহিয়া মাহি। শুরুতে তাও বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর ট্রাক প্রতীকে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
গোদাগাড়ী-তানোর নিয়ে রাজশাহী-১ আসনে জয়ে আশাবাদী এই নায়িকা থেকে রাজনীতিক ভোটের প্রচারণায় সাথে নিচ্ছেন হলুদ অথবা লাল রঙের খেলনা ট্রাক। প্রতীক বরাদ্দের দিনে দু্ই আঙ্গুলে ভি চিহ্ন দেখানো মাহির গায়ে ছিল উজ্জ্বল হলুদ কামিজ; তাতে লাল ও সোনালী সুতায় ছোট ছোট ফুল-পাতার কারুকাজ।
সেদিন সাঁওতাল পল্লীতে ভোট চাইতে যান মাহিয়া মাহি। সেসময় জর্জেটের ওড়না দিয়ে মাথা ও শরীর ঢেকে রাখেন। এক হাতে সিঁদুর লাল চুড়িও পরেছিলেন মাহি।
মুন্ডুমালা পৌরসভায় এতিমদের জন্য একবেলা খাবার আয়োজনে শিশুদের মাঝে বসা মাহি পরেছিলেন আপাদমস্তক কালো পোশাক। কালো চাদর গা মুড়িয়েছিলেন; কপালও প্রায় অনেকটাই ঢাকা ছিল মাহির।
কৃষকের ভোট চাইতে ক্ষেতে হেঁটেছেন কালো ওড়না মাথায় দিয়ে। পরনে ছিল কালো সালোয়ার। কামিজের সামনের দিক পুরো কালো, পেছনে সবুজ ও কালো বড় বড় ফুল ছাপা।
কালো পোশাকেই বাসুদেবপুর ইউনিয়নে ভোট চাইতে বেড়িয়েছিলেন তিনি। মুখে ছিল হালকা প্রসাধনী। আর নাকে সব সময় চিকন নোলক পরেছিলেন।
ভক্তদের কাছে সিনেমার জগতের এই তারকার পরিচিতি মাহিয়া মাহি নামে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টার ও ভোটারের সামনে তিনি এলেন শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া হয়ে। ভোটের মাঠের হালচাল বুঝে নিতে দিন থেকে শুরু করে রাতেও ব্যস্ত থাকছেন।
শীতের রাতে জ্যামিতিক নকশা ছাপা ওড়নায় গা মুড়িয়ে, মাথা ও কপাল ঢেকে মাইক হাতে নির্বাচনী ওয়াদা দিয়েছেন। ভোটের পোস্টারেও ওড়নায় ঢেকেছেন আধেক চুল।
ভোট চাইতে গিয়ে মাহির কালো পোশাক প্রীতি দেখা গেছে। কালো কামিজে সুতার নকশার সাথে মিল রেখে খয়েরি ওড়না পরেও প্রচারণায় দেখা গেছে তাকে।
নীললোহিত বা গাঢ় ম্যাজেন্টা রঙের তাঁতের ওড়না জড়িয়ে পাচন্দর ইউনিয়নে ভোট চাইতে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন নারী ও শিশুদের। গাড়িতে বসে ভোটারদের উদ্দেশে দিয়েছেন ভিডিও বার্তাও।
হলুদ রঙের ট্রাক হাতে পীত রঙের জামা ও ওড়নায় চান্দুরিয়া ইউনিয়নে প্রচারণা চালিয়েছেন এক সময় বাংলা সিনেমায় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া এই নায়িকা।
মাহির হাতে অনেক সময়ই লাল চ্যাপ্টা ফিতা বা সুতা বাঁধা দেখা গেছে। বেশির ভাগ সময় হালকা রঙের একই স্যান্ডেল পায়ে ছিল তার।
শীতের মিষ্টি রোদে হালকা গোলাপী কামিজে হাতে লাল ফিতা বেঁধে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার
চড় আষাঢ়দহ ইউনিয়নে ভোটারদের আশীর্বাদ মাথা পেতে নিতে ছুটে গেছেন দীর্ঘদিন সিনেমা থেকে দূরে থাকা এই নায়িকা।
উত্তরের শীতের বাতাস ভেদ করে ট্রাক প্রতীকে প্রচারণা চালিয়েছে আকাশি কামিজের সাথে ছাই রঙা ওড়না পরে। ঠোঁটে ছিল ন্যুড রঙের লিপস্টিক। এই সাজে আদিবাসীদের মাঝে তাদের সাথে তালে তালে নেচেছেনও তিনি।
সেই অভিব্যক্তি প্রকাশে ফেইসবুকে মাহি লিখেছেন, ”আদিবাসীরা আজ আমাকে আকাশ সমান সম্মান দিলো।”
মুজিব কোটে সাকিব
খেলার মাঠের সাকিব আল হাসান এর আগে রাজনীতির মাঠে নামতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তবে মাঠ পেরিয়ে অসংখ্য বিজ্ঞাপন, একাধিক শোরুম উদ্বোধন এবং নানা রকম ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে সাকিব হয়ে উঠেছেন শোবিজ জগতের একজন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকে অবাক হলেও চৌকস ব্যাটার ও বোলার সাকিব নিজ আসনে জয়ের জন্য প্রচারণায় কার্পণ্য রাখছেন না।
এরমধ্যে সাকিব আল হাসান সাদা রঙের ফুলহাতা পাঞ্জাবির সাথে গায়ে চাপিয়েছেন কালো মুজিব কোট। মাগুরা-১ আসনে ভোটের প্রচারণা পোস্টারেও সাকিব হাজির হয়েছেন এভাবে। সাকিবের এই রাজনীতিক বেশভূষা চর্চায় রয়েছে সোশাল মিডিয়াতেও।
তবে সাদা, আকাশি, ছাই রঙা টিশার্ট পরেও ভক্ত ও ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন এই অল রাউন্ডার। কখনও কালো রঙের জ্যাকেট ছিল তার গায়ে। আবার সাদা টিশার্টের সাথে লম্বা হাতার কোট, মাথা ও কান পর্যন্ত ঢাকা উলের টুপি এবং পায়ে কেডস পরে সরিষা ক্ষেতের পাশে বসে কৃষকদের সাথে পিঠা খেতে খেতে ভোট চেয়েছেন সাকিব।
ব্রেসলেট হাতে ম্যাশ
জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেও, সাকিব আল হাসান তার ব্লু টিক দেওয়া ফেইসবুক পাতায় ভোটের মাঠের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করছেন না এখনও। তবে মাশরাফি বিন মর্তুজা তার গণসংযোগের খবর দিতে শুরু করেছেন ফেইসবুকে।
ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্য ভোটের লড়াই নতুন কিছু নয়। বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি আবারও ভোট চাইছেন ভক্ত ও ভোটারদের কাছে। গায়ে আকাশি টিশার্ট পরে মাইক হাতে চলছে তার প্রচারণা।
কখনও ছাই রঙের পাঞ্জাবির সাথে কালো রঙের চাদরে নিজেকে মুড়ে নিচ্ছেন শীতের ভোটে। কখনও সাদা পাঞ্জাবিতে কখনও গাঢ় রঙের জমিনে নীল সুতার কারুকাজ করা পাঞ্জাবি পরে নড়াইল-২ আসনে ভোটারদের সাথে হাত মিলিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন ম্যাশ। ম্যাশ প্রচারণায় যেখানেই যাচ্ছেন হাতে পরে থাকছেন রুপালি রঙের একটি ব্রেসলেট।