Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

প্রিয় অভিনেতা মাসুদ আলী খানকে হারিয়ে শোকে ডুবেছে সংস্কৃতি অঙ্গন

অভিনেতা মাসুদ আলী খান সমাহিত হলেন নিজ গ্রামে।
৯৫ বছর বয়সে চলে গেলেন অভিনেতা মাসুদ আলী খান।
[publishpress_authors_box]

নন্দিত অভিনেতা মাসুদ আলী খানের মৃত্যুতে শোকে ডুবেছে তার ভক্তরা ও সংস্কৃতিঅঙ্গন। দীর্ঘজীবনের পথ চলায় অভিনয়কেই একমাত্র চিরসঙ্গী করেছিলেন। মঞ্চ নাটক দিয়ে শুরু, ৫০০-রও বেশি টিভি নাটক ও অসংখ্য চলচ্চিত্রে রঙিন পর্দার দর্শককে তার অভিনয়গুণে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন।

ঢাকার গ্রিন রোডের নিজ বাসায় বৃহস্পতিবার বিকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাসুদ আলী খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

শুক্রবার দুপুরে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিজ গ্রামের বাড়ি খান বানিয়ারাতে তাকে সমাহিত করা হয়।

একুশে পদকপ্রাপ্ত মাসুদ আলী খানের সঙ্গে পথ চলেছেন দেশের অসংখ্য গুণী নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। প্রত্যেকেই তাদের শোক ও সম্মান জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

মাসুদ আলী খানকে নিয়ে বেশ কিছু নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লিখেছেন, “কিছু কিছু শোকগাঁথা লেখা খুব কঠিন। আমরা অসংখ্য সময় অসংখ্য দিন মাস ঘন্টা একসাথে চিত্রায়ণে কাটিয়েছি। স্মৃতির বন্যা বইছে। বুঝতে পারছি না কোনটা নিয়ে লিখবো। গুডবাই, মাসুদ ভাই।”

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিক্সটি নাইন নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে মাসুদ আলী খানের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে নুসরাত ইমরোজ তিশার। চরিত্রে যেমন তিনি তিশার বাবা ছিলেন, বাস্তব জীবনেও সে অনুভূতিই তৈরি হয়ে তার জন্য তিশার। তিনি লিখেছেন-

“২০০৩-এ আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমার ‘৬৯’ সিরিজ শুরু করি।সেখানে মাসুদ আলী খান আমার বাবার চরিত্রে ছিলেন। দেড়-দুই বছর আমাদের ‘৬৯’ এর শ্যুটিং চলে। ধীরে ধীরে উনি আমার বাবার মতোই হয়ে যান। লাস্ট তার সাথে যখন আমার দেখা হয়েছে একটা আ্যওয়ার্ড শো-তে। তখন উনি হুইল চেয়ারে বসা। আমার হাতটা ধরে বললেন, “মা কি অবস্থা? কেমন আছিস? বাচ্চা কেমন আছে? সরয়ার কেমন আছে?” আমি হাসি মুখে তার হাঁটুর কাছে বসে বললাম, “সবাই ভালো আছে, বাবা। আলহামদুলিল্লাহ!”

“তার সাথে আমার শেষ স্মৃতিটি ছিল তার সেই হাসি মুখটি! আজ উনি এই পৃথিবীতে নেই। রেখে গেছেন অনেক স্মৃতি।”

টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানভিন সুইটি তার সঙ্গে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। তারও বাবার মতোই হয়ে উঠেছিলেন মাসুদ আলী খান।

“একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা শ্রদ্ধেয় মাসুদ আলী খান আঙ্কেল আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) কয়েকদিন আগেই কথা হলো আঙ্কেলের সাথে। ভীষণ স্নেহ করতেন আমাকে, আমিও প্রায় ফোন করে খবর নিতাম আঙ্কেলের। একসাথে কতো নাটকে কাজ করেছি আমরা। শুটিং এর সময় মনে হতো, সত্যি উনি আমার বাবা। আপনি যেখানে থাকেন ভালো থাকবেন। আপনার আত্নার শান্তি কামনা করছি।”

অভিনেত্রী শাহনাজ খুশী লিখেছেন, “জীবনটা একটা সিনেমা রীলের মত! এই চকচকে সকাল, আবার মেঘলা বিকাল। বাথরুমে পড়ে যেয়ে দীর্ঘদিন তিনি অভিনয় থেকে দুরে ছিলেন। আমাদের মিডিয়া/মঞ্চের মানুষের সব সময়ই তাঁকে কাছে আনতে, কাছে যেতে চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ একটু বেশী করেছে। সব হিসাবের বাইরে চলে গেলেন আজ।”

অভিনেত্রী ফারজানা ছবি লিখেছেন, “আমাদের সবার প্রিয় মানুষ মাসুদ আলী খান কাকু চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাল ইলাইহি রাজিউন। ওপারে ভালো থাকবেন । নীচের ছবিটির দু’জন বয়োঃজ্যাষ্ঠকে আমরা হারিয়েছি। ধীরে ধীরে অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ছি আমরা সবাই।”

নির্মাতা ও প্রযোজক খ ম হারুণের সাথেও দীর্ঘদিনের পথচলা ছিলো এ অভিনেতার। তিনি লিখেছেন, “আমার অতি প্রিয়জন শ্রদ্ধেয় মাসুদ আলী খান আর আমাদের মাঝে নেই। যাঁর সাথে পরিচয় সেই ছাত্র জীবন থেকে। তিনি সেই ষাটের দশকে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ড্রামা সার্কল’, যে প্রতিষ্ঠানটি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতো নব নাট্যআন্দোলনের মিছিলে সামিল হতে। বিটিভিতে আমার অনেক নাটকে তাঁকে পেয়েছি একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে। অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে। ”

শোক জানিয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, মনিরা মিঠু, শতাব্দী ওয়াদুদ, দীপান্বিতা মার্টিনসহ আরও অনেকেই। শোক জানিয়েছে নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত