Beta
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

অদ্ভুত পোশাকে তারকারা: স্কিজোটাইপাল মনোরোগী নাকি স্বাধীনচেতা

(বামদিক থেকে) লেডি গাগা, উরফি জাভেদ এবং ডিজে সোনিকা
(বামদিক থেকে) লেডি গাগা, উরফি জাভেদ এবং ডিজে সোনিকা
[publishpress_authors_box]

শো-বিজে ‘অদ্ভুত’ সব পোশাক আর কাণ্ড ঘটিয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন কোন কোন শিল্পী। বিনোদন সাংবাদিকরাও মুখিয়ে থাকেন কখন একটু ‘অন্যরকম’ কিছু করবেন তারা। সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ কেউ অদ্ভুত ‘পোশাক’ পরাকেই সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার সিঁড়ি হিসেবেও নিয়েছেন।  

শো-বিজের ‘অদ্ভুত’ আর ‘অন্যরকম’ ফ্যাশন কিংবা পোশাকের প্রসঙ্গে এলে তালিকায় সবার উপরে থাকবেন লেডি গাগা। যুক্তরাষ্ট্রের এই গায়িকা গানের পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের উদ্ভট পোশাক পরে দর্শকদের সামনে এসেও বারবার আলোচনাযর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভারতীয় টিভি তারকা উরফি জাভেদও তার উদ্ভট পোশাকে ক্যামেরার সামনে বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আলোচনা-সমালোচনায় রয়েছেন।   

এমনকি উদ্ভট পোশাকের কারণে হেনস্তার শিকারও হয়েছেন এ অভিনেত্রী। কিছুদিন আগে মুম্বাইয়ের রাস্তায় ‘প্রকাশ্য নগ্নতার’ অভিযোগ এনে উরফির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন এক বিজেপি নেতা। 

বাংলাদেশের এক সংগীত তারকাও নিজের বিচিত্র পোশাক এবং চেহারায় ভিন্ন সাজের জন্য মাঝেমাঝেই সোশাল মিডিয়ার আলোচনার জন্ম দেন। আলোচিত এ তারকা বাংলাদেশের প্রথম নারী ‘ডিস্ক জকি’ মারজিয়া কবির সোনিকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অন্যরকম’ আর ‘অদ্ভুত’ পোশাক নিয়ে আলোচনা আর ট্রল, তার পেশাগত পরিচয়কেও ছাপিয়ে যায়। 

বিনোদন জগতে ‘ভিন্ন’ এবং ‘অন্যরকম’ হওয়ার ট্রেন্ড নতুন কিছু নয়। বরং একেই আমরা ধরে নিই স্বাভাবিক। তবে উপরে যাদের নাম এলো তাদের পোশাক ও সাজের বৈচিত্র্য অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ তো বটেই, ফ্যাশন সচেতনদেরও ‘ধাক্কা’ দেয়।

প্রশ্ন হলো, এমন চূড়ান্ত বৈচিত্র্য নিয়ে নিজেকে উপস্থাপনের প্রবণতাগুলো আসলে কতটা ‘স্বাভাবিক’?  

দেখা যাচ্ছে, আলোচনায় থাকতেই কিছু তারকা সব সময় নিজেকে সাধারণের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। আর ভিন্ন কিছু না হলে কিসের তারকা! কিন্তু নিরন্তর এই ‘ভিন্ন’ এবং ‘অন্যরকম’ হতে চাওয়ার চেষ্টাকে মনোবিজ্ঞান দেখছে ভিন্নভাবে। 

ডিজে সোনিকা

আমেরিকান সাইকোলোজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অদ্ভুত সাজপোশাক আর উদ্ভট চিন্তার মানুষদের থাকতে পারে ‘স্কিজোটাইপাল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার’। 

বিজ্ঞানীদের মতে, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা উদ্ভট এবং অস্বাভাবিক চিন্তাই শুধু করেন না, তারা আমাদের অভ্যস্ত আদব-কায়দার বাইরে থাকতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পরেন উদ্ভট এবং অস্বাভাবিক কাপড়-চোপর। 

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কথা বলার ভঙ্গি হয় অস্বাভাবিক এবং এরা তার প্রতি অন্যের আনুগত্য নিয়ে সবসময়ই থাকেন সন্দেহগ্রস্ত। ভোগেন অস্বাভাবিক উদ্বেগে। তাহলে প্রশ্ন এসেই যায় ‘উদ্ভট’ পোশাক পরে আলোচনায় থাকা তারকাদের কি এই বিশেষ রোগটি আছে? নিজেদের ‘উদ্ভট’ বেশভূষা নিয়েই তাদের যুক্তিগুলোই বা কী?

নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি ‘গাগা: ফাইভ ফুট টু’-তে লেডি গাগাকে বলতে শোনা যায় একেবারেই ভিন্ন কিছু। এতে গাগা বলেন, “ইন্ডাস্ট্রি যখন আমাকে যৌনাবেদনময়ী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে, তখন আমি এমন কিছু করছি যার মধ্য দিয়ে আমার নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছেই থাকছে।” 

ডকুমেন্টারিতে গাগা হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নারী-পুরুষের ক্ষমতার সম্পর্ক তুলে ধরে বলেন, “আমি পুরুষের যাবতীয় দুঃখের ভার নিতে এখানে (মিডিয়া) আসিনি।”

২০১০ সালে এমটিভি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে লেডি গাগা ‘মিট ড্রেস’ পরে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০২১ সালে বিজনেস ইনসাইডারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ ব্যাপারে মুখ খোলেন। গাগা বলেন, “আপনি দেশের জন্য জীবন দেবেন, অথচ আপনি কে বা কী- এ নিয়ে রাষ্ট্রের কি আসে যায়?”

১৯৯৪ সালে আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্সের অধীনে একটি আইন পাশ করা হয়। আইনে সেনাবাহিনীতে সমকামী ব্যক্তিদের লৈঙ্গিক পরিচয় বহন করে এমন কিছু প্রকাশ করা নিষিদ্ধ করা হয়। আর এই পলিসিকে বলা হতো ‘ডোন্ট আস্ক ডোন্ট টেল পলিসি’।

গাগা এই পলিসির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই ‘মিট ড্রেস’ পরেছিলেন। গাগা হয়তো বলতে চাইছিলেন, সমকামী মানুষেরা দেশের জন্য যতোই জীবন দিতে রাজি থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের কাছে তারা ‘পরিচয়হীন মাংসপিণ্ড’ ছাড়া আর কিছুই নয়। 

কিন্তু উরফি জাভেদের ঘটনাটা কী? 

টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ‘বিতর্কিত’ পোশাক নিয়ে উরফি জাভেদ খোলামেলা কথা বলেছেন। উরফি বলেন, “নিজের সৌন্দর্য দেখাতে কে-না চায়। আমিও চাই নিজের খুশি মতো কাপড় পরে খুশি থাকতে। এখন কেউ যদি এসব দেখে প্ররোচিত হয় এটা তার সমস্যা।” 

জালের পোশাকে উরফি জাভেদ

ডিজে সোনিকার ‘ভিন্নরকম’ লুক নেওয়া বা পোশাক পরার বিষয়টি জানা যায় তার এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে সোনিকা বলেন, যেকোনও একধরনের চেহারায় তিনি ‘বোর’ হয়ে যান। 

তবে ‘অদ্ভুত’ বা ‘অন্যরকম’ পোশাক পরা কিংবা সাজগোজ করা নিজের স্বাধীন ইচ্ছার বহির্প্রকাশও হতে পারে। এসব যে স্কিজোটাইপাল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারেরই লক্ষণ হবে, সেটি নয়।

চমকপ্রদ তথ্য হলো, জগদ্বিখ্যাত শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগ এবং কুখ্যাত হিটলারেরও নাকি এ মনোরোগটি ছিল বলে অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত