সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে পাঁচ সদস্যের নতুন পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব) ডা. মো. রেজাউল হক। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আরও চার জন।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে তা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলমের কাছে পাঠানো হয়।
আদেশে বলা হয়, ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ৪৭ এর উপধারা (১) এবং ধারা ৪৮ এর উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হলো।
একইসঙ্গে আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ও জনস্বার্থে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠনের জন্য একজন পরিচালক ও চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হলো।
নতুন পর্ষদে কেবল রেজাউল হকই সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারগ্রহীতা। তিনি অ্যাকটিভ বিল্ডার্স, লিটল হাউস ও ফোরাম কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান। এছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি ও ইউনাইটেড হাসপাতালের উদ্যোক্তা পরিচালক রেজাউল হক।
এছাড়া পর্ষদে আরও যে চার ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আনোয়ার হোসেন।
ব্যাংকটি ২০১৭ সালে দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর থেকে চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ীর নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনদের দ্বারাই ব্যাংকটি পরিচালিত হয়ে আসছিল।
ঢাকার মতিঝিলের সিটি সেন্টারে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। ব্যাংকটির সবশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন এস এ মাসুদের জামাতা মো. বেলাল আহমেদ।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত ১১ আগস্ট ব্যাংকটির সাবেক পরিচালকদের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির পর্ষদ পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়।
ব্যাংকটির সাবেক পরিচালকদের একটি অংশ ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা জানান, ব্যাংকটির মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ নিয়োগ, ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এস আলম নিয়ন্ত্রিত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আহ্বান জানান তারা।
গত ১৮ আগস্ট সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠান ব্যাংকটির তিন উদ্যোক্তা। তারা হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব) রেজাউল হক, নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিসুল হক ও নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আঙ্গুর রহমান।
চিঠিতে তারা অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের তৎকালীন নেতৃত্বকে পদত্যাগে বাধ্য করে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নতুন করে যে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, তার সিংহভাগ নামে–বেনামে তুলে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও তাদের সহযোগীরা।