৬৫ বছর বয়সী কোনো নারীর জন্য চেয়ারে বসে ব্যায়াম বা যোগাসন আরামদায়ক হয়ে ওঠে; বিশেষ করে যাদের আর্থ্রাইটিস অর্থ্যাৎ অস্থিসন্ধিতে ব্যথা রয়েছে। ২০২৩ সালে হেলথকেয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাতেও এসব কথা উঠে এসেছে।
এই ভঙ্গিতে ব্যায়াম করলে নারীর শারীরিক সক্ষমতা বজায় থাকে। এতে করে প্রতিদিনের কাজে সক্রিয় থাকা যায়। চেয়ারে যোগাসন নিয়মিত করা হলে অস্টিওআর্থারাইটিস হয়ে কর্মশক্তি বিকল হওয়ার ঝুঁকিও কমে আসে।
এসব পরামর্শের সঙ্গে সিএনএনের প্রতিবেদন আরও বলছে, বুড়োদের পাশাপাশি যে কোনো বয়সীদের সুস্থতার জন্য চেয়ারে যোগাসন দারুণ ভাবে কাজে দেয়; বিশেষ করে যারা অফিসে কাজের চাপে টানা কয়েক ঘণ্টা চেয়ারেই বসে থাকেন।
মোটে ১৫ মিনিটের জন্য চেয়ারে যোগাসন অথবা নিয়ম মাফিক মেডিটেশন করলে মানসিক ও শারীরিক চাপ কমে আসে।
এভিডেন্স বেইজড কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন জার্নালে ২০১২ সালে এই উপকারিতার কথা বলা হয়।
অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের মানসিক চাপ কমিয়ে সুস্থ রাখতে চেয়ারে যোগাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলেও জানাচ্ছে সিএনএন।
সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়াতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানে চেয়ারে যোগাসনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন স্টেসি ডুরেক।
একজন সনদপ্রাপ্ত যোগ প্রশিক্ষক ডুরেক বলেন, “এ ধরনের চর্চা সব বয়সীদের জন্য নিরাপদ এবং খুব আরামদায়ক।
“শারীরিক নমনীয়তা ও সঠিক ভঙ্গিমা ধরে রাখতে এর উপকারিতা আছে। কর্মক্ষেত্রে লোকজন তো ঝুঁকে কাজ করে চলে সারাক্ষণ। তারপর একসময় কারপাল টানেল সিনড্রমে ভুগতে শুরু করে।”
শরীরের নড়াচড়া করার সামর্থ বাড়িয়ে তোলে চেয়ার যোগাসনে, বললেন এনসলে ডেভিস।
শিকাগো শহরের ইয়োগাসিক্স প্রতিষ্ঠানের এই প্রশিক্ষক জানালেন, তিনি যে কোনো বয়সীদের প্রশিক্ষণ দিতে আনন্দ বোধ করেন।
যদিও তাদের কাছে চেয়ার ইয়োগা চর্চা করতে বয়স্করাই বেশি আসেন; বিশেষ করে যাদের কোনো আঘাতের ঘটনা আছে, আর যারা ওঠা-বসা করতে গিয়ে ব্যথা অনুভব করেন।
“চেয়ার ইয়োগা করলে পেশী ও সন্ধিতে নমনীয়তা আসে। তাতে করে নড়াচড়ায় আরাম বোধ হয়। এই ব্যায়াম অনেকটা বিশ্রামের মতই।”
প্রতিদিন যোগাসন করা হলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাডড়ে, ঘুম ভালো হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা থাকে না; সবচেয়ে বড় কথা মন ভালো থাকে।
চেয়ারে যোগাসন কীভাবে করবেন
প্রতিদিন পাঁচ মিনিট সময় বরাদ্দ করাই যায় চেয়ারে যোগাসনের জন্য।
“সপ্তাহে একদিন এক ঘণ্টা ধরে ব্যায়াম করার চেয়ে প্রতিদিন মোটে পাঁচ মিনিট বসে যোগাসন করলেও কাজে দেবে। এতে করে অভ্যাস হয়ে যাবে”, বললেন ডুরেক।
তবে যোগাসনের সময় যদি বেশি ব্যথা অনুভব হয় তাহলে ওই আসনটি তখনকার মতো এড়িয়ে আরও সহজ আসন বেছে নিতে হবে।
অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে চেয়ারে যোগাসন করার পরামর্শ দিলেন ডুরেক।
এজন্য চেয়ারের একেবারে প্রান্তে বসে সামনে মুখ করে। এবার হাত ও পা বৃত্তাকারে ঘুরাতে হবে এক সঙ্গে।
মেরুদণ্ডের জন্য উপকারী হলো ক্যাট-কাউ যোগাসন। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে শ্বাস নিয়ে চিবুক উপরে তুলুন। এসময় বুক উপরের দিকে উঠবে খানিক। এবার শিথিল হতে হতে মাথা নামিয়ে আনুন নিচে যেন ঘাড় ঝুঁকে আসে এবং পিঠ কুঁজো হয়ে আসে। এই যোগাসনে পিঠের আরাম হয়।
এবার চেয়ারে বসে ডান হাত উপরে তুলুন এবং বাম দিকে হেলে পড়ুন। এরপর ঠিক এর উল্টো ব্যায়ামটি করুন অর্থ্যাৎ বাম হাত উপরে তুলে ডান দিকে হেলে পড়ুন।
টুইস্ট যোগাযোগটি শরীরকে দ্রুত তাজা অনুভব করায়। চেয়ারে বসে একদিকে শরীর মোচড় দিয়ে ধরে রাখুন। এরপর আবার অন্য পাশে একই ভাবে করুন।
ঘাড়ের ব্যথা কমাতে চেয়ারে সোজা হয়ে বসে পায়ের পাতা সমান ভাবে মেঝেতে রাখুন। দুই হাত সোজা করে উপরে তুলুন। এরপর ধীরে ধীরে ঝুঁকে আসুন যেন হাঁটুতে বুক স্পর্শ করে এবং হাত মেঝে ছুঁতে পারে।
ঘাড়ের ব্যথা কমাতে আরও একটি সহজ যোগাসন রয়েছে। এজন্য চেয়ারে বসে এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের কনুই ধরতে হবে। দুই হাত এভাবে আটকে ফেলে ধীরে ধীরে মাথার উপরে তুলতে হবে। পাঁচ গোনা পর্যন্ত এভাবে থেকে হাত নামিয়ে স্বাভাবিক হন।
বিশ্রামের জন্য চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। এসময় দুই হাত থাকবে দুই হাঁটুর উপর আলতো ভাবে। ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। এই যোগাসন চেয়ারে বসেই কয়েক মিনিট করবেন।
চেয়ার থেকে ওঠার আগে বা ফের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে চেয়ার বসে দুই হাতে ইংরেজি এক্স বর্ণের মতো একটি আরেকটির উপরে নিয়ে বুকের উপর রাখুন কিছুক্ষণ; এতে মনে প্রশান্তি বোধ করবেন।