Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

মেট্রোরেল পুনরায় চালুতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যেখানে

৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর রবিবার
সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দুটি স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেল; ৩৭ দিন পর রবিবার তা আবার চালু হয়েছে। ছবি : হারুন অর রশীদ
Picture of কমল জোহা খান

কমল জোহা খান

৩৭ দিন আগের ঘটনা। চাকরিতে কোটা সংস্কারে দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ১৮ জুলাই সারাদেশে চলছিল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। আন্দোলনে উত্তাল চারিদিক। তার ঢেউ এসে পড়ে ঢাকার মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরে।

সেদিন সেখানে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরানো হয়। আগুনের শিখা ছুঁয়ে যায় পুলিশ বক্সের একবারে কাছাকাছি থাকা মেট্রোরেলের ট্র্যাকেও। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনটি। টানা একদিন আগুনে পোড়ে পুলিশ বক্সটি। উত্তপ্ত হয়ে থাকে মেট্রোরেলের ট্র্যাকও। পরদিন ১৯ জুলাই মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশনে রাতভর হামলা, লুটপাট হয়।

সেদিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজধানীবাসীর চলাচলের স্বস্তির বাহন মেট্রোরেল। এরপর আন্দোলন তীব্র হয়, সহিংসতাও বাড়ে। কয়েকশ মানুষের মৃত্যুর পর গত ৫ আগস্ট ঘটে সরকারের পতন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল চালুর ঘোষণা দেন।

সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে শুরু হয় মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) জোরাল কার্যক্রম। কিন্তু সাড়ে ২১ কিলোমিটারে দীর্ঘ মেট্রো রেলপথের মিরপুর-১০ পুলিশ বক্সের অংশটি ঝুঁকিমুক্ত কি না, সেটি যাচাই করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে। কারণ এই অংশটি টানা ২৪ ঘণ্টার মতো আগুনে পুড়েছিল।

গত ১৮ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশ বক্সে লাগানো আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ফুটব্রিজে, সেই আঁচ লাগে ওপরের মেট্রোরেলের ট্র্যাকে।

ডিএমটিসিএলের ম্যানেজার (সিভিল অ্যান্ড পি-ওয়ে) মাহফুজুর রহমানের কাছে মেট্রোরেল পুনরায় চালুর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে একথাই বলেন তিনি।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হবে হয়ত মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের পাশে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ওপর রেললাইন ঠিকই আছে। তবে আমাদের ভীষণ শঙ্কা ছিল, এটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী আছে কি না?

“আগুনের তীব্রতায় এখানকার সেগমেন্ট কংক্রিট, রডসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়ে চিন্তা ছিল। বিশেষজ্ঞ দিয়ে স্বল্প সময়ে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বরের এই অংশটি কেমিক্যাল টেস্ট করানো হয়েছে। রিপোর্ট পজিটিভ আসায় চালু সম্ভব হয়।”

৩৭ দিন পর আবার শুরু হয়েছে ঢাকার মেট্রোরেলের চলাচল। ছবি : হারুন অর রশীদ

এরপর যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কিছু কাজ করতে হয়েছিল ডিএমটিসিএলকে।

মাহফুজুর বলেন, “পুরো রেল ট্র্যাক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করানো হয়েছে। এরপর ইলেকট্রিক ডিভাইস চেক করতে হয়েছে। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া ছাড়াও অন্য সব স্টেশনের প্রতিটি ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুয়েপমেন্টস চেক করা হয়েছে। কারণ এসব ইক্যুয়েপমেন্টের একটি অকেজো থাকলে পুরো সিস্টেম অচল হয়ে যেতে পারে।”

দ্রুত মেট্রোরেল চালু ‍উদ্যোগে অবকাঠামোগত ঝুঁকি ছাড়াও ডিএমটিসিএলের ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মীদের ধর্মঘটও বড় বাধা ছিল। সরকার পরিবর্তনের সময় দাবি আদায়ে তাদের এই আন্দোলনও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, বলেন ডিএমটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা। এই ধর্মঘটের জন্য ১৭ আগস্ট ঘোষণা দিয়েও মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব হয়নি।

রবিবার সকালে মেট্রোরেলের পুনঃযাত্রার শুরুতে আগারগাঁও থেকে উঠে সচিবালয় স্টেশনে নেমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও এনিয়ে কথা বলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মেট্রোরেলের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সেটা চালু করা সম্ভব হয়নি। আপনারা জানেন, এটা বড় অন্যায় কাজ করেছে। তিন লাখ যাত্রীকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা, এটা শুভ লক্ষণ না।”

এ দফায় ট্রেন চালু হলেও কাজীপাড়া ও ১০ নম্বর স্টেশনটি বন্ধই থাকছে। কারণ ভাংচুর ও লুটপাটের কারণে স্টেশন দুটি চালুর অবস্থায় নেই।

মেট্রোরেলের কোনও কোচে আগুনের আঁচ লাগেনি। তা হলে ওয়ারেন্টি পাওয়া যেত না বলে জানালেন ডিএমটিসিএলের ট্রেন পরিচালনাকারী কয়েকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, মেট্রোরেলের প্রতিসেট ট্রেনের দাম বাংলাদেশের মুদ্রায় ১৮০ কোটি টাকা। এর নির্মাতা জাপানের মিটসুবিশি কোম্পানি। ট্রেনগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদ ২৯ বছর। ঢাকায় মিরপুর-১০ মেট্রোরেলপথে আগুনের ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গে ডিএমটিসিএলের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল মিটসুবিশি।

ঝুঁকি নিয়ে মেট্রোরেল চালানো হলে তারা ওয়ারেন্টির শর্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে সর্তক করেছিল। যে কারণে তখন এই বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

গত ১৯ জুলাই মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

মেট্রোরেলে হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়ার কথা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারও বলেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরও একই কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, “যারা দেশকে পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে, তাদের পক্ষে এ ধরনের কাজ তো করা সম্ভব না। এটা দুষ্কৃতকারীদের কাজ। আপনাদের কাছে তাদের ভিডিও আছে, ফুটেজ আছে। আমরা এর জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”

মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বাড়াতে এটিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই বা কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

“মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, যাতে করে কেউ এভাবে সার্ভিসটাকে ব্যাহত করতে না পারে।”

ঢাকাবাসীর স্বপ্নের বাহন মেট্রোরেল চালু হয় ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চলত। পরের বছরের নভেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল শুরু হয়। এটি আরও সম্প্রসারিত হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাওয়ার কথা রয়েছে।

সড়কে যানজটের নগরী ঢাকায় মেট্রোরেলে যাতায়াত ক্রমেই বাড়ছে। গত জুন মাসে সংসদে তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, মেট্রোরেলে প্রতিদিন তিন লাখ মানুষ চলাচল করছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত