রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “কোনও ডেভেলপমেন্ট হলে আপনারা জানবেন।”
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার পদত্যাগের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও সেই পদত্যাগপত্রটিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পদত্যাগপত্র নিয়ে সম্প্রতি নতুন তথ্য দেন প্রবীণ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার কোনও পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি পাননি।
বিষয়টি নিয়ে সেই থেকে চলছে তুমুল আলোচনা। এরই মধ্যে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। অসত্য বলার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে সরকারও।
তবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, “এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
ভবিষ্যতে এমন কোনও সিদ্ধান্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা ভবিষ্যত বলে দেবে।”
এরপর বুধবারও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে কয়েকশ মানুষকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “আমাদের অবস্থান তো আপনারা দেখছেন– যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের বলেছি তারা যেন বঙ্গভবনের পাশ থেকে সরে যান। গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে বঙ্গভবনের আশেপাশের সিকিউরিটি বাড়িয়েছি।”
রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত পোষণ করায় পরবর্তী ধাপে কী হবে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি– এটা লিখতে পারি কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি শফিকুল আলম বলেন, “জ্বি।”
তিনি বলেন, “আজকে ১১টায় বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়। এ সময় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির সঙ্গে এ বৈঠক চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছে, আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রচুর কথা হচ্ছে। এটার অংশ হিসেবে আজকে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনও ডেভেলপমেন্ট হলে আপনারা জানবেন।”
তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, দেশে নতুন করে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হোক, তা চায় না বিএনপি।
মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার অসুস্থতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, “আমরা প্রচুর ফোন পেয়েছি, প্রফেসর ইউনূসের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকে ইনকোয়ারি করেছেন। আমরা জানাতে চাই, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং ভালো আছেন।
“প্রতিদিনই তিনি মিটিং করেন, তার ছবি দিচ্ছি আমরা। কালকেও অনেকগুলো মিটিং করেছেন। আজকেও তিনি বিএনপির সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলেন। পুরো সপ্তাহজুড়ে অনেকগুলো মিটিং।”