Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের ঘোষণায় ঢাকার সড়কে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা

অবরোধের মধ্যে বাস চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবিটি মিরপুর থেকে তোলা।
অবরোধের মধ্যে বাস চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবিটি মিরপুর থেকে তোলা।
[publishpress_authors_box]

সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যানসহ এই ধরনের থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধে বিআরটিএ’র জারি করা বিজ্ঞপ্তির ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ঢাকার সড়কে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। প্রতিবাদ জানিয়ে কোথাও সড়ক অবরোধ করছেন এসব বাহনের চালকরা, কোথাও পুলিশ থ্রি হুইলার চলতে বাধা দিচ্ছে, তো কোথাও নির্দিধায় চলছে ‘অটোরিকশা’।

বিআরটিএ’র ঘোষণার প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে মিরপুর-১, আগারগাঁও, মাটিকাটা, মিরপুর-১০, ১১, ১২, টেকনিক্যাল, কালশী, সরকারি বাঙলা কলেজ, বাড্ডা, তালতলা, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে হাতে লাঠি নিয়ে অবরোধ কর্মসূচী পালন করেন চালকরা।

এমনকি মিরপুর এলাকায় কয়েকটি মেট্রোরেল স্টেশনের সিঁড়িতেও তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।

সবশেষ বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে মিরপুরের কালশী মোড়ের ট্রাফিক পুলিশের বক্সে আগুন দেয় আন্দোলনরত চালকরা।

পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান জানান, কালশীতে সহিংস আন্দোলনের এক পর্যায়ে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিক্ষুব্ধ আন্দোলনের মধ্যেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের মিরপুর বিভাগ। আটক করা হচ্ছে অবৈধ এসব রিকশা ও ভ্যান। তবে প্রতিবাদ জানিয়ে বেশ মারমুখী অবস্থাতেই আছেন চালকরা।

অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চালকরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিলে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চালকরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সি সাব্বির আহমেদ বলেন, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অটোরিকশাচালকরা মিরপুর-১০ নম্বর চত্বরে এসে জড়ো হচ্ছেন। তারা লাঠি হাতে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন।

তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতেও কাজ করার কথা জানালেন তিনি।

মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার জসিম উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১, আগারগাঁও ও কালশী এলাকায় কয়েকশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা বেশ কয়েকজন প্যাডেলচালিত রিকশাচালককে মারধর করেন এবং মিরপুর-১১ এলাকায় বেশ কয়েকটি বাসের কাঁচও ভাঙচুর করা হয়।

অটোরিকশাচালকদের অবরোধের কারণে কোথাও কোথাও যেমন সড়কে যানজট দেখা দিয়েছিল আবার অটোরিকশা না চলায় অনেক সড়ক ছিল যানজটমুক্ত।

অবরোধের কারণে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
অবরোধের কারণে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

পল্টনের পানির ট্যাংকি এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গুলশান-১ নম্বর এলাকার অফিসে যাওয়া আসা করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোস্তফা। তিনি জানালেন, মাত্র ২০ মিনিটে অফিসে পৌঁছে গেছেন। অন্যদিন যেখানে অটোরিকশার জটে পড়তে হয়, আজ তা ছিল না। পরে ফেইসবুক দেখে জানতে পারেন যে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মাহমুদ নামে আরেকজন জানালেন, অন্যদিন খিলক্ষেত থেকে পল্টন যাওয়ার জন্য হাতে অন্তত এক ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হতে হয়। কারণ মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা এলাকায় প্রচণ্ড যানজট থাকে। বিশেষ করে অটোরিকশাগুলোর এলোপাতাড়ি চলাচলের কারণে ওই পথে চলা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে আজ পথে কোনও অটোরিকশা না থাকায় সকালে মাত্র ৩০ মিনিটে অফিস পৌঁছে গেছেন বলে জানালেন তিনি।

অবশ্য ঢাকার সব সড়কের দৃশ্য এক ছিল না। কোথাও কোথাও অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই চলেছে অটোরিকশা।

ঢাকার আদাবর, মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্যান্য দিনের মতোই ছিল অটোরিকশার চলাচল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশের সামনে দিয়েই চলতে দেখা গেছে থ্রি-হুইলার। উত্তরাতেও চলেছে তিন চাকার এই হালকা বাহন।

বিভিন্ন পথে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে দেখা গেছে বিপরীত প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি ক্ষুব্ধও হয়েছেন অনেকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে রিকশাচালকদের আন্দোলনের একটি ছবি শেয়ার করে একজন লিখেছেন, “আমি এবং আমরা ঢাকাবাসীর প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ বাসিন্দা, যারা ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক নয়। আমাদের নির্ভর করতে হয় রিকশার ওপর। বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়া, মা-বাবাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে, বাড়ি থেকে প্রধান সড়কে যেতে রিকশা প্রয়োজন। আজকে দেখলাম রাস্তা একদম ফাঁকা। কয়েকটি প্যাডেল রিকশা চলাচল করছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিশ্বের কোনও দেশ বিকল্প বিবেচনা না করে জনপ্রিয় পরিবহন ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করে না।”

অনেকেই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের নিয়ে সবচেয় বিপদে পড়েন অভিভাবকরা। অনেক সড়কে পর্যাপ্ত রিকশা না থাকায় প্যাডেলচালিত রিকশার চালকরা হাঁকিয়েছেন দ্বিগুণ ভাড়া।

অফিসগামী মানুষ কিংবা জরুরি কাজে বাড়ি থেকে বের হওয়া মানুষ প্রয়োজনীয় যানবাহন পাননি। আবার অবরোধের কারণে কোথাও কোথায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। বিভিন্ন পথ ঘুরে, অলিগলি পেরিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

দিনভর সড়কে মারমুখী অবস্থায় ছিলেন অটোরিকশা ও ভ্যানচালকরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, মোটরচালিত গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই এমন চালকদের কারণে ব্যাটারি রিকশায় নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সালে ৮ হাজার ৫৫টি দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল এই ধরনের থ্রি হুইলার। 

বর্তমানে ঢাকায় কী পরিমাণ ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে তার কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৯ সালে এক গবেষণায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) জানিয়েছিল, ঢাকায় ১১ লাখের বেশি প্যাডেল রিকশা এবং ২ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে।

সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ও যানজট নিরসনে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোয় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপদেষ্টা পরিষদ।

গত ১৫ মে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্বে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “সারাদেশে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং এসব যানবাহনে হতাহতের হার বেশি। ঢাকা শহরে কোনও ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার চলবে না। এর আগে আমরা ২২টি হাইওয়েতে এটি নিষিদ্ধ করেছিলাম।”

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

যা আছে বিআরটিএ’র নির্দেশনায়

শনিবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বিআরটিএ বলেছে, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী ব্যাটারি/রিকশা বা ভ্যান বা এ ধরনের থ্রি-হুইলার এবং ফিটনেসের অনুপযোগী, রংচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এ অবস্থায় ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারি/রিকশা বা ভ্যান বা এ ধরনের থ্রি-হুইলার এবং ফিটনেসের অনুপযোগী, রংচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান চালানো বন্ধ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সেখানে জানানো হয়েছে।

ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা এ জাতীয় থ্রি-হুইলার চলাচলের কারণে ঢাকার সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছে বিআরটিএ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত