সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্লোগান দেওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের একাধিক কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দেখা যায়।
হলের শিক্ষার্থীরা জানায়, ঢাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শুরু করে।
এর কিছুক্ষণ পর রাত সোয়া ১টার দিকে হলটির প্রথম ব্লকের তৃতীয় তলার অন্তত ৮টি কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীরা, যা চলে রাত পৌনে ২টা পর্যন্ত। এসময় তারা হলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদও করে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, হলের প্রথম ব্লকের তৃতীয় তলায় উঠে শিক্ষার্থীদের কক্ষের দরজা লাগানো দেখলে সেগুলো তারা খুলতে বলে। বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ওই সময় শিক্ষার্থীদের গালাগালি করেন। শিক্ষার্থীরা দরজা খুলতে না চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলে ওঠেন, “এই আমি তোদের গালিব ভাই বলছি। একটু কথা বলব। দরজা খোল।”
একাধিকবার ডাকাডাকির পর একপর্যায়ে দরজা খুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর গালিব তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। কয়েকজনের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথাও বলেন তিনি।
একটি কক্ষের দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় সেই কক্ষে গালিব ঢুকে দরজা লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেসময় ধারণ করা এক ভিডিওতে তাকে কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আঙুল তুলে কথা বলতে দেখা যায়।
তখন মাদার বখশ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. রুকনুজ্জামান আবাসিক শিক্ষক আমিরুল ইসলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হককে নিয়ে হলে ঢোকেন।
পরে মাদার বখশ হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক গালিব প্রাধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে হল ত্যাগ করেন।
মাদার বখশ হলের শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে তল্লাশি ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুল্লা-হিল-গালিব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মধ্যরাতে মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। এতে হলের শিক্ষার্থীদের ঘুমের সমস্যা হয়।
“বিষয়টি জানতে পেরে আমি ও আমার নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাই। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থীর কক্ষে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাই। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি হলের পরিবেশ যাতে অস্থিতিশীল করা না হয়।”
লাঠিসোঁটা বা দেশীয় অস্ত্র বহনের অভিযোগ অস্বীকার করেন ছাত্রলীগের এই নেতা।
এদিকে মাদার বখশ হলে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তল্লাশি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছেন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. রুকনুজ্জামান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে পেয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কক্ষে কেউ তল্লাশি চালিয়েছে, এমন কোনও কিছু তার চোখে পড়েনি।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই হল প্রশাসন করবে বলে জানান প্রাধ্যক্ষ রুকনুজ্জামান।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে রাত পৌনে ৯টার দিকে মশাল মিছিল বের করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন ছাত্র গণমঞ্চ, নাগরিক ছাত্র ঐক্য ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন তারা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে সমাবেশ করেন সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
এসময় তারা ‘প্রতিরোধে প্রতিশোধ, গড়ে তোলো প্রতিরোধ’, ‘সারাদেশে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘কোটা প্রথার সংস্কার, করতে হবে করতে হবে’, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দেয়।