বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কয়েক দফা সংঘর্ষে অর্ধশত আহত হয়েছে।
রবিবার দুপুরের সংঘর্ষের পর অন্তত ৭০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এদের মধ্যে নগরীর বাইরে থেকে আহতরাও রয়েছেন।
আহতদের চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। চারজনের মধ্যে দুজনকে ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড এবং বাকি দুজনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন রবিবার সকাল ১১টার দিকে নিউ মার্কেট মোড়ে জড়ো হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে সেখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও একত্র হতে শুরু করে।
এসময় নিউ মার্কেট এলাকাসংলগ্ন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে একটি মিছিল এবং উত্তরপ্রান্তে রাইফেলস ক্লাব থেকে আসা আরেকটি মিছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যেই সংঘর্ষ বেধে যায়।
এসময় বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে।
পরে তারা নগরের লালদিঘীর পাড় থেকে আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে নিউ মার্কেট মোড়ের দিকে আসলে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এরপর বিকাল পর্যন্ত নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থান করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে টাইগারপাস মোড়ে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বিকাল ৪টায় দিনের কর্মসূচির শেষ করার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক তালাত খান তালাত মাহমুদ রাফি। ফেইসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “যে যেখানে আছেন প্রত্যেকটা পয়েন্ট থেকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে নিরাপদে মুভ করার অনুরোধ করছি। কেউ খালি হাতে মুভ করবেন না। যদি কেউ হামলা করতে আসে উপযুক্ত জবাব দেবেন। আগামীকাল আবারও দেখা হবে।”
সন্ধ্যা ৬টায় কারফিউ শুরুর আগেই সেনাবাহিনী নামে নগরীতে। জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার মোড় ও চট্টেশ্বরী রোড এলাকায় সেনা সদস্যদের যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা যায়।
সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চালানো হয়। একই সময়ে হামলা হয় সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়েও।
এই চার আওয়ামী লীগের নেতার বাসভবন ও কার্যালয়ে হামলার প্রায় কাছাকাছি সময়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের বাসভবনেও হামলা হয়।
এ দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বন্দরনগরীর পরিস্থিতি।
চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চলাকালে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সেসময় ৪৫ বছর বয়সী এক পথচারী নিহত হন। তিনি নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন সকালে চট্টগ্রামের রাস্তাঘাটে যানবাহন বেশ কম ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ।
রবিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে অফিস-আদালত ও ব্যাংক খোলা রয়েছে। তবে ব্যাংকে লেনদেন চলছে সীমিত পরিসরে।
চট্টগ্রাম থেকে রবিবার সকালে কোনও আন্তঃজেলা বাস ছেড়ে যায়নি। তবে অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ট্রেন চলাচল আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর জাহাজ ভেড়া, জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও বন্দর থেকে পণ্যছাড় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল।
এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের ভেতরে পণ্যপরিবহন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় কোনও পণ্যবাহী যান যায়নি।