মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসা-বাড়িতে গ্যাস নিয়ে সঙ্কট কেটেছে। তবে সিএনজি সরবরাহকারী ফিলিং স্টেশন, গ্যাসনির্ভর সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ।
এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্যাসশূন্য হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগরী। তবে সকাল নাগাদ গ্যাস না থাকার বিষয়টি বুঝতে পারে নগরবাসী। নগরীর সব এলাকাতেই শুক্রবার সারাদিন গ্যাস বন্ধ ছিল। সারাদিন চেষ্টার পর শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়। শনিবার সকাল থেকে ধীরে সচল হতে থাকে গ্যাসের চুলা।
শনিবার কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাকলায়েন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সকাল থেকেই গ্যাস পেতে শুরু করেছেন আবাসিক গ্রাহকরা। তবে ভালো চাপ নিয়ে গ্যাস পেতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে। কারণ গ্যাস সরবরাহের সঞ্চালন লাইন পুরোটাই খালি ছিল। সেটি ভর্তি হয়ে আগের অবস্থায় ফিরতে কিছু সময় লাগবে। বিকাল নাগাদ পুরোদমে চালু হতে পারে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি টার্মিনাল থেকে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করা হয়। আমদানিকৃত এলএনজি প্রথমে জাহাজ থেকে ভাসমান টার্মিনালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পাইপলাইনে নেওয়া হয় মহেশখালীর স্টোরেজে। সেখানে নির্দিষ্ট চাপে এলএনজিকে সিএনজিতে রূপান্তর করে মাটির নিচে থাকা পাইপলাইনে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে বাসা বাড়ি, শিল্প করখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ।
দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানি ‘এক্সিলারেট এনার্জি’কে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় গত অক্টোবরে। সেটি গত ১৭ জানুয়ারি মহেশখালীতে ফিরে। এরপর সংযোগ করতে গিয়ে কারিগরি ত্রুটিতে ঘটে বিপর্যয়। একইসঙ্গে আরেকটি টার্মিনাল দেশীয় ‘সামিট এনার্জি’কে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ফলে আগে থেকেই সেটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছিল। ফলে এক্সিলারেট এনার্জি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সামিট এনার্জি টার্মিনাল দিয়ে বিপর্যয় সামাল দেওয়া যায়নি।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শাহ আলম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এক্সিলারেট টার্মিনাল চালু হয়েছে। একইসঙ্গে সামিটের টার্মিনালে থাকা কিছু এলএনজি পাইপলাইনে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। ফলে সকালে আমরা ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। দুপুর থেকে বিকাল নাগাদ সেই সরবরাহ আরও বাড়বে।”
এদিকে গ্যাস পেয়ে চট্টগ্রামবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তবে সিএনজি স্টেশন চালু না হওয়ায় সড়কে সিএনজিচালিত যানবাহন একেবারেই ছিল না। এলপিজিভিত্তিক কিছু যানবাহনের দেখা মিলেছে। এছাড়া ডিজেলচালিত গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “চট্টগ্রাম পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর হওয়ায় বিপর্যয়ে পড়েছে। এই সময়ে অবশ্যই বিকল্প থাকা উচিত। এলএনজি যখন বন্ধ থাকবে বা হঠাৎ ফেইল করবে তখন জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এটা চট্টগ্রামের দাবি নয়; বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রয়োজনেই।