কক্সবাজারের মহেশখালীতে থাকা ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ‘এক্সিলারেট এনার্জি’র মাধ্যমে পুরোদমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এতে চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে সঙ্কট কেটেছে, লাইনে গ্যাসের চাপও পর্যাপ্ত আছে।
এদিকে, মহেশখালীতে ভাসমান ‘সামিট এনার্জি’র টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে প্রায় দুই মাসের জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। মার্চের এটি ফেরার আগ পর্যন্ত একটি টার্মিনাল থেকেই গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রবিবার সকাল থেকে প্রায় ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দিচ্ছি। আর তা ‘এক্সিলারেট এনার্জি’র একটি টার্মিনাল থেকেই। ফলে গ্যাসের সরবরাহ সঙ্কট এখন আর নেই। চাপ পুরোদমে পাচ্ছেন গ্রাহকরা।”
তিনি বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘সামিট এনার্জি’ টার্মিনালটি দুদিন আগে থেকেই ধীরে ধীরে শাটডাউন করা হয়েছে। লাইনে থাকা গ্যাস খালি করা হয়েছে। শনিবার রাতে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। ভাসমান এই টার্মিনালটি রবিবার বা সোমবার সকালে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। এখন ‘এক্সিলারেট এনার্জি’র টার্মিনাল দিয়েই এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।”
একটি টার্মিনাল দিয়ে চালাতে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির আরেক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “একটু সঙ্কট থাকবে, তবে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। গত দুইমাস একটি টার্মিনাল দিয়েই এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। তখন তো ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট (গ্যাস) দেওয়া হতো। এখন ৪৯০ মিলিয়ন ঘনফুট দেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন চাহিদা বাড়বে তখন দুটি টার্মিনাল লাগবেই। অবশ্য তার আগেই অর্থাৎ মার্চের ১০ তারিখের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ শেষ করে সেটি (সামিট এনার্জি) চলে আসার শিডিউল আছে।”
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে দুটি, যার মোট সক্ষমতা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। একটি মার্কিন কোম্পানি ‘এক্সিলারেট এনার্জি’র, আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘সামিট এনার্জি’র। দুটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতা থাকলেও সরকার চাহিদা ও দাম অনুযায়ী সরবরাহ কম-বেশি করে।
বিশেষায়িত জাহাজে করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি হয়ে মহেশখালীর সাগরে থাকা ভাসমান দুটি টার্মিনালে ভিড়ে। টার্মিনালে থাকা পাইপলাইনে সংযোগ দিয়ে সেই এলএনজি প্রথমে স্টোরে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে মাটির নিচে থাকা পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম শহরে। আর চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি ডিস্ট্রিবিউশন থেকে আবাসিক, বাণিজ্যিক সংযোগে সরবরাহ দেওয়া হয়।
মহেশখালীর দুটি টার্মিনালের মধ্যে ‘এক্সিলারেট এনার্জি’ টার্মিনালটি গত অক্টোবরে রক্ষণাবেক্ষণে গিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি মহেশখালীতে ফেরে। তবে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ত্রুটি সারিয়ে গত শুক্রবার রাত থেকে এলএনজি সরবরাহ ফের শুরু হয়। শনিবার রাতে সেটি ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে, যা রবিবার সকালে ৪৯০ মিলিয়ন ঘনফুটে গিয়ে দাঁড়ায়। টার্মিনালটির ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামসহ সবস্থানে গ্যাস সঙ্কট কেটেছে। সরবরাহ লাইনে গ্যাসের চাপও বেড়েছে।
গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় চট্টগ্রামে নগরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। শনিবার গ্যাস পেয়ে আবাসিকের গ্রাহকরা খুশি হলেও সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং সিএনজিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প কারখানার মালিকরা গ্যাস না পাওয়ায় ছিলেন উদ্বিগ্ন। গ্যাস সরবরাহ ও চাপ বাড়ায় রবিবার সেই উদ্বেগও কাটতে শুরু করেছে।
রবিবার সকাল থেকেই সিএনজি স্টেশনগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। শনিবারের মতো দীর্ঘ লাইন রবিবার ছিল না। আর গ্যাসের চাপও ভালো ছিল। ট্যাক্সি চালক রহিম উদ্দিন ভূঁইয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শনিবার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিয়েছি। টাকা দিয়েছি, কিন্তু সব ছিল বাতাস। ফলে সারাদিন আমাকে গ্যাসের বদলে তেলেই গাড়ি চালাতে হয়েছে। তেলে চালাতে গিয়ে বাড়তি খরচ উশুল করতে গিয়ে যাত্রীদের সাথে প্রায়ই বিতণ্ডা হয়েছে। আজ গ্যাস নিতে পেরেছি, ফলে সেই উঠকো ঝামেলা নেই।”
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু সাকলায়েন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গ্যাস সরবরাহ এবং চাপ স্বাভাবিক হওয়ায় সিএনজি স্টেশন পুরোদমে চালু হয়েছে। আবাসিকে তো আগে থেকেই স্বাভাবিক আছে। আর গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর প্রক্রিয়া চলছে।”
এদিকে, গ্যাস সরবরাহ বাড়ায় চট্টগ্রামের শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রবিবার দুপুর নাগাদ সেই কেন্দ্র থেকে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে জানিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দুপুর নাগাদ (বিদ্যুৎকেন্দ্র) চালুর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। অনুমতি পেলেই সেই কেন্দ্র থেকে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে।”
তিনি বলেন, “শীতকালে চাহিদা কম থাকায় এমনিতেই চট্টগ্রামে লোডশেডিং নেই। এলএনজি সরবরাহ ট্রিপ করায় একটু সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু অতটা নয়। শিকলবাহা (বিদ্যুৎকেন্দ্র) চালু হলে সেই সমস্যাও থাকবে না।”