Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

কে এনেছিল কোকেন, নিচ্ছিল কোথায়

শাহ আমানত বিমানবন্দরে এই কোকেন উদ্ধার করা হয় এক বিদেশির কাছ থেকে।
শাহ আমানত বিমানবন্দরে এই কোকেন উদ্ধার করা হয় এক বিদেশির কাছ থেকে।
[publishpress_authors_box]

এবার কোকেন ধরা পড়ল এবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পাউডার অবস্থায় এসেছে প্রায় ৪ কেজি কোকেন। বাহামা দ্বীপপুঞ্জের নাগরিক এস্টেলিয়া শান্তেই নামে এক নারী এই কোকেনসহ ধরা পড়েছেন।

এই বিমানযাত্রী ব্রাজিলের সাও পাওলো বিমানবন্দর থেকে দুবাই হয়ে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম আসেন গত ১৩ জুলাই । সেদিন তার লাগেজ আসেনি।

সোমবার লাগেজ আনতে সেই যাত্রী চট্টগ্রাম বিমানবন্দর গিয়েছিলেন এবং কাস্টমস স্ক্যানিং শেষ করে লাগেজ নিয়েই বের হওয়ার সময় এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স তাকে আটকায়। তাদের সঙ্গে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইর সদস্যরাও ছিল। পরে ওই লাগেজ থেকে ইউপিএসের মোড়কের ভেতর লুকানো কোকেন উদ্ধার করা হয়।

এই কোকেন আসার খবর গোয়েন্দা সূত্রে আগেই পাওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আগে থেকেই এপিবিএন দল এবং এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি দল তথ্য পেয়ে যাত্রীর ওপর নজরদারি রাখছিল। আজ বিমানবন্দরে লাগেজ আসার পর যাত্রীসহ সেটি ধরা পড়ে। ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম কোকেন পাউডার যাত্রীসহ আটক করা হয়েছে।”

এই ধরনের কোকেন আটক চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এটাই প্রথম বলে জানান ইব্রাহিম খলিল।

বিমানবন্দরে না হলেও নয় বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেনের বড় একটি চালান ধরা পড়েছিল, তবে তা আনা হয়েছিল তরল অবস্থায়। ২০১৫ সালের জুনে ধরা পড়া সেই চালান এসেছিল সূর্যমুখী তেলভরতি ড্রামে।

বিমানপথে আসা কোকেনের সবচেয়ে বড় চালানটি ধরা পড়েছিল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এই বছরের জানুয়ারিতে প্রায় সাড় ৮ কেজি কোকেনসহ ধরা পড়েছিলেন আফ্রিকার দেশ মালাবির এক নারী।

স্ক্যানিংয়ে কেন ধরা পড়ল না

এমনিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা লাগেজ স্ক্যান করতে ব্যাপক কড়াকড়ি দেখান কাস্টমস কর্মকর্তারা। কিন্তু এত বড় কোকেন চালান আসে বাধা ছাড়াই। স্ক্যানে ধরা না পড়ায় বিমানবন্দরের কাস্টমস নিরাপত্তা তল্লাশি আসলে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এস্টেলিয়া দেখতে আফ্রিকানদের মতো। সােমবার বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিং পাশ-ট্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছিলেন তিনি। সোমবার লাগেজ নিয়ে কাস্টমস স্ক্যানিং করেই পার হয়ে যান। স্ক্যানে কিছু ধরা না পড়লেও তাকে আগে থেকে নজরদারিতে রাখা এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স, এপিবিএন ও এনএসআই সদস্যরা ধরে ফেলে। এরপর লাগেজ কেটে মোড়ক খুলে কোকেন পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভাগ্যিস চালানটা আটক করে ফেলেছিলাম। তা না হলে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর যদি অন্য কোনও সংস্থার লোকজন চালানটি আটক করত, তাহলে প্রথমে কাস্টমসই বিপদে পড়ত।”

তিনি বলেন, “আগে থেকেই গোয়েন্দা তথ্য ছিল না এনএসআইর হাতে। কিন্তু সেই নারীর চেহারা দেখে কিছুটা সন্দেহ হয় এবং পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিতে ইতস্তত করেন। তখন সন্দেহটা আরও বাড়ে।”

ঘটনার সময় দায়িত্বে ছিলেন বিমানবন্দরের চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসাইন।

স্ক্যানে কেন ধরা পড়ল না- জানতে চাইলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি মিটিংয়ে আছি আধা ঘণ্টা পরে কথা বলবে।”

আধা ঘণ্টা পর অনেকবার ফোন দিলে তিনি আর সাড়া দেননি। ফলে স্ক্যানের এই দুর্বলতার কারণ জানা যায়নি।

সেই যাত্রী দুদিন চট্টগ্রামে কোথায় ছিল

আটলান্টিক সাগরের দ্বীপরাষ্ট্র বাহামার নাগরিক এস্টেলিয়া শান্তেই এসেছেন ব্রাজিল থেকে। সাও পাওলো বিমানবন্দর থেকে প্রথমে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের আরেকটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান ১৩ জুলাই।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম নেমে এই নারী নগরীর ‘হোেটেল আগ্রাবাদ’ এ উঠেছিলেন। হোটেলে ছিলেন দুদিন। সোমবার সকালে তিনি হোটেল থেকেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যান।

অন্য কোনও দেশে পাচার হতো

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে কোকেনের বেশ কিছু চালান ধরা পড়ার পর কৌশল পাল্টে সেই চক্র চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। আর দুবাই, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে কোকেন আনার ক্ষেত্রে বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে বিদেশি নাগরিকদের।

চট্টগ্রামে নামা এই চালানটি কোথায় যেত?

এই প্রশ্নের উত্তরে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স, এপিবিএন, কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সবাই বলেছেন, এই চালানটি চট্টগ্রামের জন্য আনা হয়নি। তবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেওয়া হতো। তারপর তৃতীয় কোনও দেশে পাচার হতো।

পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, এস্টেলিয়া বাংলাদেশে এসেছেন এই প্রথম। তিনি দুবাই-চট্টগ্রাম ফ্লাইটে এলেও ১৫ জুলাই তার টিকেট ছিল ফ্লাই দুবাইয়েরই ঢাকা-দুবাই ফ্লাইটের। অর্থাৎ তার ঢাকা হয়েই ফেরার কথা ছিল।

বিমানবন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বাহামার নাগরিক আসলে কোকেন চালানের একজন বাহক। তিনি হয়ত লাগেজটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ঢাকা যেতেন। এরপর ঢাকায় চালানটি নির্দিষ্ট গ্রাহককে বুঝিয়ে দিয়ে রাতেই ঢাকা থেকে দুবাই উড়াল দিতেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এই চালান চট্টগ্রাম আনতেও এক ধরনের চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে, ১৩ জুলাই যাত্রী সরাসরি চট্টগ্রাম এলেও ইচ্ছা করেই লাগেজটি সঙ্গে আনেননি। কারণ এই লাগেজ নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বের হতে হবে। আবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে নিতে হবে। সেখান থেকে আবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এনে ঢাকায় নিতে হবে। এত ঝুঁকি এড়াতেই মুলত লাগেজটি পরে এনেছেন যাত্রী। কারণ ৩০ কেজি জনের লাগেজটি তো যাত্রীর সাথেই আনার সুযোগ ছিল। মুলত তার উদ্দেশ্য ছিল বিমানবন্দর থেকে লাগেজটি নিয়ে আভ্যন্তরীন ফ্লাইটে ঢাকায় চলে যাওয়া।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র ইব্রাহিম খলিল বলেন, “এখন এপিবিএন দল যাত্রীসহ কোকেন আটক করেছে। চালানটি রিসিভার কে, সেটি যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। এখন আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে চালানটি এবং যাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত