Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

কোমরসমান পানিতে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল

চট্টগ্রামের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও চকবাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে এমন চিত্রই দেখা যায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
চট্টগ্রামের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও চকবাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে এমন চিত্রই দেখা যায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

টানা ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টি, সঙ্গে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কগুলোকে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, মোহাম্মদপুর, ষোলশহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চাক্তাই, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ ও চাঁন্দগাও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে রয়েছে নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল, আবাসিক এলাকা আর দোকানপাট।

জলাবদ্ধতার মধ্যে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী মানুষ। একদিকে যানবাহন অপ্রতুল। তার ওপর চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকদের ধর্মঘট। ত্রাতা হিসেবে হাজির হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।       

মুরাদপুরের বাসিন্দা তৌফিকুর রহমান চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায় কর্মরত। সকালে তার পক্ষে কাজে যাওয়া সম্ভবই হয়নি।

তৌফিকুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার বাড়ির নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে। বিদ্যুতের মিটার প্রায় পানি ছুঁই ছুঁই। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় বিদ্যুৎ বন্ধ রেখেছি।

“ছাদ থেকে দেখছি চারদিকে পানি আর পানি। চট্টগ্রামে প্রতি বছর জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। এই দুর্দশা থেকে কবে মুক্তি পাব, জানা নেই।”

নগরের আরেক বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা কাছেদুল হক। চাঁন্দগাও আবাসিক এলাকায় থাকেন। অফিস চাক্তাইয়ে। সকাল ১১টা পর্যন্ত ঘরবন্দি ছিলেন তিনি। না পারতে এরপর বের হন তিনি।  

মুরাদপুরের একটি বাড়ির সামনের জলাবদ্ধতা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

ঘরের বাইরে বের হয়ে অফিসের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কাছেদুল হক বলেন, “হেঁটে হেঁটে কোমরসমান পানি মাড়িয়ে প্রধান সড়কে এসে দেখি কোনও গাড়ি নেই। কারণ সেখানে হাঁটুপরিমাণ পানি। এখন চাক্তাই শাখায় পৌঁছতে আরও অন্তত দুই কিলোমিটার হাঁটতে হবে। দেখি, কতদূর যাওয়া যায়।”

এই যখন অবস্থা, তখন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে নগরের নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ।  

বৃষ্টি থাকবে

বুধবার সকাল থেকে নগরজুড়ে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়, যা পরদিন সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয় বুধবার মাঝরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই সময়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে কেবল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাতেই বৃষ্টি হয় ৫৫ মিলিমিটার।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে শুরু হয় দিনের প্রথম জোয়ার, যা কর্ণফুলী নদী বেয়ে বিভিন্ন শাখা খাল হয়ে নগরে ঢুকে পড়ে। এর ফলে বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে কর্ণফুলী নদী হয়ে সাগরে পৌঁছতে পারেনি, যা নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ।  

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আলী আকবর খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় আছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় আছে।

“এ কারণে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যুক্ত হওয়ায় জলাবদ্ধতার মাত্রা বেড়েছে।”

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। তবে বৃষ্টি আরও দুয়েকদিন থাকবে। বিশেষ করে বান্দরবান ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় ভারি বৃষ্টি হবে।

“চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে ঝোড়ো বাতাস না থাকায় সমুদ্রবন্দরে কোনও সতর্কতা আপাতত নেই।”

টানা বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় নগরের বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

টানা বৃষ্টির কারণে নগরজুড়ে পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করা হলেও সেই সতকর্তা পালনে প্রশাসনিক কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অপসারণ করা হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে।

তার জায়গায় মঙ্গলবার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে। তার তৎপরতা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।


আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত