জনগণের কাছে দেওয়া আশ্বাস অক্ষরে অক্ষরে পালনের অঙ্গীকার করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন।
মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীতে ফিরে বিএনপির সমাবেশে তিনি এই অঙ্গীকার করেন।
২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে কারচুপির অভিযোগ তুলে মামলা ঠুকেছিলেন শাহাদাত। সরকার পরিবর্তনের পর সেই মামলায় জিতেছেন তিনি। নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণার পর রবিবার ঢাকায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছ থেকে মেয়র হিসেবে শপথ নেন শাহাদাত।
সিটি মেয়র হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেন বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। বসবেন সিটি কর্পোরেশনের টাইগার পাস এলাকার অস্থায়ী কার্যালয়ে। আগামী ১৩ থেকে ১৫ মাস তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই হবে জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার যাত্রার শুরু।
সমাবেশে এই সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বাছাই করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে করার অঙ্গীকার করেন নতুন মেয়র।
শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি আপনাদের সন্তান। এ শহর আমার একার নয়। এ শহর ৭০ লাখ মানুষের। চট্টগ্রামকে সুন্দর শহর গড়ে তুলতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তুলব এ শহরকে। আমাকে একটু সময় দিন। আমার দেওয়া কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।”
সমাবেশের পর বিকালে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন নতুন মেয়র। সভার পর সংবাদ সম্মেলনে নগর সরকার গঠনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে নগর উন্নয়নে সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সাবধান করে শাহাদাত হোসেন বলেন, “কোথায় কী হচ্ছে, আমি সব কিছুই জানি। আমার নিজের হাসপাতাল আছে, নিজের বাড়ি আছে, সেখানে কী ঘটনা হয় আমি নিজেই জানি। হোল্ডিং ট্যাক্স নতুন করে বাড়ানোর দরকার নেই। যেটা আছে সেটিই সঠিকভাবে আদায় করতে হবে।”
দেড় বছরের কম সময় মেয়াদ থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ডেঙ্গু নিয়ে সবচেয়ে জোর দিতে হবে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ড আমি নিজে গিয়েই ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা দেখব।”
চসিক মেয়র বলেন, “নগর পিতা হিসেবে নয়, আমি ৭০ লাখ মানুষের নগরসেবক হিসেবে থাকতে চাই। সকল বর্ণ, ধর্ম, জাতির নাগরিক, যারা এ চট্টগ্রাম শহরে বাস করছে তাদের পাশে থেকে আমি কাজ করে যেতে চাই। আমি আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আমি আপনাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না।”
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা ট্রেনে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে পৌঁছান নতুন মেয়র বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, নানা ধরনের স্লোগান দেন।
বিএনপির এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বেলা ১১টার দিকে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে নগরীর পুরাতন স্টেশন চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। তাদের ভিড়ে দুপুর ১২টার পর পুরাতন স্টেশন চত্বর কানায় কানায় ভরে যায়। দুপুর ১টায় মেয়র শাহাদাত হোসেন সমাবেশস্থলে পৌঁছান।
দলীয় নেতাকর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন মেয়র বলেন, “আমি মহানগরে গত ১৮ বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। গত ১৮ বছর আপনারা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেননি। পরিবারের খোঁজ নিতে পারেননি। অনাহারে দিন কাটিয়েছেন।
“এ অসহায়ত্ব আমি দেখেছি। সারা বাংলাদেশে ৬০০ এর অধিক বিএনপি নেতাকর্মী গুম হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এক লাখ মামলায় ৬০ লাখ মানুষ আসামি হয়েছে। তবুও আপনারা বিএনপির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।”
চট্টগ্রাম রেল স্টেশন চত্বরের সমাবেশ শেষে মেয়র শাহাদাত হোসেন জেল রোডে অবস্থিত হযরত আমানত শাহ এবং হযরত বদর শাহ’র মাজারে গিয়ে জেয়ারত করেন। সেখান থেকে তিনি নগরীর লালদিঘীর পাড়ের চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে গিয়ে সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর করেন সংবাদ সম্মেলন।