Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

আরও বিনিয়োগে আগ্রহী শেভরন, স্বাগত জানালেন ড. ইউনূস

শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উয়িং
শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উয়িং
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশে আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে কার্যকক্রম চালানো যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন এবার এদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সরবরাহ করে আসছে শেভরন। তারা বাংলাদেশের তিনটি ক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করে প্রতিদিন এ গ্যাস সরবরাহ করছে।

তবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া গ্যাসকূপে ২৭ বছর আগে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তার ক্ষতিপূরণ শেভরনের পূর্বসূরী অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে আজও মেলেনি। সেই অভিযোগ রয়েছে পরিবেশবাদীসহ বিভিন্ন মহলে।

শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলোর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এরপর শেভরনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন, তারা খুশি যে বিগত শেখ হাসিনা সরকার গত দুই বছরে কোম্পানিটিকে অর্থ দেওয়া বন্ধ করার পর, অন্তর্বর্তী সরকার শত শত মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উৎকৃষ্টে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা শেভরনকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন খনন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছে বলে জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাসুলো।

তিনি বলেন, “আমরা নতুন উপকূলীয় গ্যাস অনুসন্ধানেও বিনিয়োগ করব।”  

নতুন গ্যাস অন্বেষণে শেভরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় কোম্পানিগুলোয় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।

“আমরা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। আমরা দেশে আরও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।”

দেশে একটি ভালো বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত মূল সংস্কারগুলো তুলে ধরে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য শেভরনের সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন ড. ইউনূস।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেভরনের বকেয়া পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শেভরন ও পেট্রোবাংলা ছয় মাসের ঋণ পরিশোধের চুক্তিতে পৌঁছেছে।

বৈঠকের পর আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ শেভরনের কূপ থেকে আসে। তারা আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ইচ্ছে করেছেন। তারা ১০ ও ১১ ব্লকে কূপ খননের প্রস্তাব দেবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গ্যাসের নতুন চাহিদা হচ্ছে। তারা জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গেও বসবেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বের তেল-গ্যাস খাতের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান শেভরন ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রথম উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) সই করে। তারা ১৯৯৮ সালে সিলেটের জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন শুরু করে। ২০০৭ সালে বিবিয়ানায় উৎপাদনে আসে। মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রেও উৎপাদন করছে তারা।

দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছে শেভরন। তারা বাংলাদেশের তিনটি ক্ষেত্র থেকে উৎপাদন করে প্রতিদিন এ গ্যাস সরবরাহ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্যাস আসছে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। বিবিয়ানায় নতুন করে আরও কিছু এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান করবে শেভরন।

তবে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণে পুড়ে যায় ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস। তদন্তে প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেই সময় যার ক্ষতি নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান বাজার দরে তা লাখ কোটি টাকা হবে।

ওই অগ্নিকাণ্ডে লাউয়াছড়া বনের বড় একটি ক্ষতি হয়। অনেক বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়, যা টাকার অংকে পূরণ করার নয় বলে অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত