সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলন থেকে সরকার পতন পর্যন্ত গণঅভ্যূত্থানে ছাত্রদলের ৪৯ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বুধবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আয়োজিত ব্রিফিংয়ে নিহত নেতাকর্মীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
ছাত্রদল নেতাকর্মীসহ আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্ট মাসের আন্দোলনে ছাত্রদলের ত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে শুরু থেকেই ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছে।
“১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাইদ শহীদ হয়েছেন। তার মৃত্যু পুরো দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছে। একইদিন চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য ওয়াসিম আকরাম শহীদ হয়েছেন। শহীদ হয়েছে মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি।”
এসময় নিহত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নাম জানান তিনি। এরা হলেন, চট্টগ্রাম কলেজের ওয়াসিম আকরাম, ঢাকা মহানগর (পূর্ব) ছাত্রদলের আরিফুর রহমান রাসেল, শেরপুর সরকারি কলেজের মাহবুব আলম, শ্রীবর্দী সরকারি কলেজের সবুজ মিয়া, ময়মনসিংহের গৌরীপুর মোজাফফর আলী ফকির উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের বিপ্লব হাসান, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের অর্জুন ইউনিয়নের ইমন মিয়া, মাগুরা জেলা ছাত্রদলের মেহেদি হাসান রাব্বী, কুড়িগ্রামের উলিপুর ছাত্র দলের রায়হানুল ইসলাম, লক্ষীপুর সরকারি কলেজের মো.শহিদ কাউসার হোসেন বিজয়, ঢাকা মহানগর (পূর্ব) ছাত্র দলের ফজলে রাব্বী, মুন্সিগঞ্জ মীরকাদিম ছাত্র দলের মানিক মিয়া শারিক।
এছাড়া রামপাল ছাত্রদলের ফরিদ শেখ, ঢাকা মহানগর ৪০ নং ওয়ার্ড ছাত্র দলের ইসমাইল হোসেন রাব্বী, সূত্রাপুর থানা ছাত্র দলের শাওন, ঢাকা মহানগর(পশ্চিম) ছাত্র দলের শামীম হাওলাদার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ইরফান ভুঁইয়া, ভাটারা থানার মুনির হোসেন, সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটির ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, ঢাকা মহানগর(উত্তর) ছাত্রদলের তাহিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের মতলবের পাভেল হাসান রাব্বী, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের ৭ নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম, ফতু্ল্লা ইউনিয়ন ছাত্রদলের রাকিব আহমেদ।
গাজীপুরের গাছা মেট্রো থানা ছাত্রদলের হৃদয় হোসেন, সাভার ছাত্র দলের আফিকুল ইসলাম সাদ, পল্লবী থানা ছাত্রদলের লিটল হাসান লাল্লু, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি বারগাঁও ইউনিয়নের তানভীর হোসেন মাহমুদ, জামালপুরের শরীফপুর ছাত্রদলের সপ্ত, জামালপুরের দিকপাইভ ছাত্র দলের মো. জাহিদুল ইসলাম, হবিগঞ্জের ৯ নং ওয়ার্ডের রিপন চন্দ্র শীল, নেত্রকোনার দূর্গাপুর থানার গুজিরকোনা ছাত্রদলের সাইফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ছাত্র দলের আফজল মিয়া, পঞ্চগড় জেলার বোদার ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সুমন ইসলাম।
মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাগর আহমেদ, যশোর ছাত্রদলের তানভীর রায়হান আলিফ, ইউসুফ আলী, বাগেরহাটের চিতলমারি শেরে বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সাব্বির মল্লিক, আমিনুর রহমান কলেজের আহাদ আলী, মাগুর জগদল ইউনিয়নের রাজু আহমেদ, নরসিংদীর মাধবদীর মো. শাওন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জালালউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের আসিফ হোসেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের তানভীর সিদ্দিকী, ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের নুরুল মোস্তফা, ঝালকাঠির ৭ ওয়ার্ডের রাকিব হাওলাদার, মুলাদী সরকারি কলেজের মো. রিয়াজ, পটুয়াখালীর গলাচিপার সাগর গাজী, সোনারগাঁও ইউনির্ভাসিটির রাসেল মাহমুদ, সিরাজগঞ্চ জেলার সদরপুরের সুমন এবং নরসিংদীর শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজের আমজাদ হোসেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে শোকমিছিল কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।
ছাত্রদল ইতিবাচক রাজনীতি চলমান রাখবে জানিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, “আমরা মনে করছি, আগামীতে রাজনীতি হবে ইতিবাচক। আমরা প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ইতিবাচক রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা চলমান রাখতে চাই।”
ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশজুড়ে চলা কোনও সহিংসতার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয় এমন দাবি করে সংগঠনটির সভাপতি রাকিব বলেন, “আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ছাত্রদল কোনও বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ছাত্রদল শত নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে টিকে আছে। আমাদের কোনও নেতা বিশৃঙ্খলা বা দখলবাজীর সঙ্গে জড়িত নন।”
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।