ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা জানিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ঢাকার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বেইজিং।
রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইয়াও ওয়েন। সেখানেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় চীন সরকার ও দেশটির জনগণের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
তিনি বলেন, “বেইজিং ঢাকার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং আমি আশাবাদী যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ সফল হবে এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধ হবে।”
বৈঠকে সবুজ অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে চীনের কিছু সোলার প্যানেল কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বেইজিং ও ঢাকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন।
তিনি বলেন, “চীন সোলার প্যানেলের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, তবে রপ্তানি বাজারে ক্রমবর্ধমান বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। চীনা উৎপাদনকারীরা তাদের সোলার প্যানেল কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে পারেন। এটি বাংলাদেশকে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও সবুজ অর্থনীতিতে রূপান্তরে সহায়তা করবে।”
দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে চীনে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি সম্প্রসারণের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি স্থানান্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও কৃষিখাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বানও জানান।
ড. ইউনূসকে তার সুবিধাজনক সময়মতো চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশ এখন একটা সন্ধিক্ষণ পার করছে, তবে বাংলাদেশের জনগণ এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।”
চীন ও বাংলাদেশের কৌশলগত এবং সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বের সম্পর্ক সর্বোচ্চে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশ আগামী বছর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বছর উদযাপন করবে।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা কবলিত অঞ্চলে অস্ত্র বিরতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে চীনা সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে চীন রাজনৈতিক, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও আশার কথা জানান ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা চীনে তার স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, “চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং অনেক তরুণ থ্রি-জিরো ক্লাব গঠন করেছে। এসব ক্লাবের সদস্যরা দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি দুই দেশের তরুণ সম্প্রদায় ও জনগণের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এসময় চীনা রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে ২০ হাজার মার্কিন ডলারের একটি চেক হস্তান্তর করেন। তিনি জানান, চীনা রেড ক্রসও বাংলাদেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এক লাখ মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তা দেবে।
তথ্যসূত্র : বাসস