Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রতিহত করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

দেশের নাগরিকদের যে যার অবস্থান থেকে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রতিহত করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ধর্ম আমাদের উদারতা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও সহিষ্ণুতা শিক্ষা দেয়। আবার ধর্মের অপব্যাখ্যাই অনেক সময় মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। তাই আমাদেরকে ধর্মের মানবিক শিক্ষা গ্রহণ করে বৈষম্যহীন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে– যে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য আমাদের জুলাই বিপ্লবের শহীদগণ তাদের জীবন আত্মাহুতি দিয়েছেন।

বিভেদের দেয়ালগুলোকে সম্প্রীতির বন্ধনে রূপান্তরিত করার মধ্যেই মানবজাতির মুক্তির পথ নিহিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সঙ্গত কারণেই, আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমরা যে যার অবস্থান থেকে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রতিহত করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।”

সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার কথাও বলেন তিনি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম মূল ভিত্তি, তা বিগত শতাব্দীর বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংঘাত থেকে শিক্ষা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সকলের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবোত্তর এই নতুন বাংলাদেশকে সম্মিলিতভাবে আমরা অগ্রগতির পথে নিয়ে যাব।”

তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্য পরিণত হোক এমন এক প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্যমতে যার উপর ভর করে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ বা স্তম্ভ স্ব স্ব অবস্থান হতে প্রকৃত অর্থে স্ব স্ব স্বাধীনতা বজায় রেখে সেই জাতীয় ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজয়া পুনর্মিলনী ও বাণী অর্চনা উদযাপন পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

উৎসব যে ধর্মেরই হোক না কেন, তা একাত্মতার প্রতীক উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “উৎসব আমাদের মধ্যে একাত্মতা বাড়ায়। সবাই মিলেমিশে উৎসব উপভোগ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মানুষে মানুষে বিভেদ ও বৈষম্য দূর করে মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার প্রদানের বিষয়ে শিক্ষাদান করি। এভাবেই ধীরে ধীরে একটি সমাজ আলোকিত হয়।”

বর্তমানে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি, হিংসা, হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সেখানে শারদীয় দুর্গোৎসবের চেতনা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কেননা দেবী দুর্গার পৌরানিক ঘটনাবলী আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শিক্ষা দেয়।

“তাই এই শিক্ষাকে ধারণ করে আমাদের প্রত্যককে এমনভাবে কাজ করে যেতে হবে যাতে আমরা সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্যমে সমাজের অসহায় ও দুর্বলদের জন্য একটি ন্যায়নিষ্ঠ পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হই। তবেই আমাদের শারদীয় দুর্গোৎসবের চেতনার উজ্জীবন ও চর্চা সফল হবে।”

‘মূল লক্ষ্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা’

দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা বিচার বিভাগের মূল লক্ষ্য এবং আইনজীবীরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেতন আছেন জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “কিন্তু তারপরেও আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে প্রচলিত সকল ধর্মেই সুবিচার বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

“তাই আমরা যদি নিজেদেরকে ধার্মিক কিংবা অন্ততপক্ষে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দাবি করি, তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজের অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব অবদান রাখতে হবে।”

অসুরের বিনাশের মাধ্যমে দেবী দুর্গা যে কেবল মন্দ বা অকল্যাণের বিনাশ ঘটিয়েছেন তা নয়; বরং এর প্রতীকী তাৎপর্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের কল্যাণ নিশ্চিত করেছেন বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে যে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার কোনও বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সবার অধিকার। আমি বিশ্বাস করি, বারের প্রত্যেক সদস্য এই চেতনাকে বুকে ধারণ করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচেতন রয়েছেন।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

‘ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে সবাই বাংলাদেশি’

অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমরা যখন মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা চিন্তা করি, জুলাই অভ্যুত্থানের কথা চিন্তা করি, তখন আমরা ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে থেকে চিন্তা করি, সবাইকে বাংলাদেশি মনে করি। সেই জায়গা থেকে গুটি কয়েক মানুষের উস্কানিতে যদি আমরা বাংলাদেশকে অশান্ত করতে চাই, তাহলে আগুন যেখানেই লাগুক না কেন, কারো দেবালয়, কারও মসজিদ, কারও মন্দির, কারও ঘর কোনও কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না।”

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “যাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে এই বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে, যাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ হয়েছে এই বাংলাদেশকে নিয়ে নিয়ে যদি কোনও অঙ্গন থেকে কেউ বিভেদের রাজনীতি করি, ধর্মের রাজনীতি করি, বিভক্তির রাজনীতি করি তাহলে কেউই আমরা সেই ক্ষতি থেকে উঠে আসতে পারব না বলে আমি মনে করি।”

নব্বইয়ের গণআন্দোলনের কথা স্মরণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দুই দশক যেতে পারেনি, আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের বুকে কীভাবে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে আসার জন্য দুই হাজারেরও বেশি তরুণ তুর্কীকে বুকের রক্ত দিতে হয়েছে।”

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির বিজয়া পুনর্মিলনী ও বাণী অর্চনা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সব্যসাচী মণ্ডল। এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন চাঁদপুরের শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ স্থিরাত্নানন্দজী মহারাজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত