আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) জানিয়েছে, চলতি মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত তাদের কাছে পরীক্ষা করাতে আসাদের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশের চিকুনগুনিয়া ধরা পড়েছে।
সোমবার চিকুনগুনিয়া নিয়ে এক সতর্কবার্তায় আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, চলতি মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত তাদের ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিজের বিভিন্ন শাখায় জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে মানুষ এসেছে। তাদের মধ্যে ১৭১ জন রোগীর আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ১৪০ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়; যা শনাক্তের হিসাবে প্রায় ৮২ শতাংশ। এই হার গত বছরের তুলনায় উদ্বেগজনক।
আইসিডিআর,বি জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২৮৯ জনের পরীক্ষায় ১৪৯ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়; শনাক্তের হার ছিল ৫২ শতাংশ। চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া ধরা পড়েছে ১৭৭ জনের।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৫ জনের পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৯ জনের, শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে ৯ এবং ৬ জনের পরীক্ষা হলেও কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। এপ্রিলে পরীক্ষা হয় ৭ জনের, শনাক্ত হয় ২ জন; শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ। মে মাসে পরীক্ষা হয় ৩৮ জনের, শনাক্ত হয় ২৬ জন; শনাক্তের হার ৬৮ শতাংশ। চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে- ১ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আসা ১৭১ জন রোগীর আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে ১৪০ জনের; শনাক্তের হার ৮২ শতাংশ।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, এই হার গত বছরের তুলনায় উদ্বেগজনক। তাই ঢাকাবাসীসহ সবাইকে চিকুনগুনিয়া নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
চিকুনগুনিয়া কী
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যা জিকা ও ডেঙ্গুর মতো এইডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণে হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর, তীব্র জয়েন্টে ব্যথা এবং ক্লান্তি দেখা দেয়।
প্রতিরোধে যা করবেন
আশপাশে জমে থাকা পানি (যেমন ফুলদানি, টব, টায়ার, বালতি এ ধরনের পাত্রে) প্রতি ৩ দিনে একবার ফেলে দিন, যেন এইডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে।
অব্যবহৃত পানির পাত্র ঢেকে রাখুন এবং ব্যবহৃত পাত্রগুলো ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করুন। কারণ মশার ডিম পাত্রের গায়ে লেগে থাকতে পারে।
মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে মশানাশক স্প্রে বা ওষুধ ব্যবহার করুন।
ঘরের ভেতরে স্প্রে, কয়েল,জানালায় নেট, এবং দিনে-রাতে মশারি ব্যবহার করুন।
মশার কামড় এড়াতে হালকা রঙের ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরুন।
চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ
হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, গিরায়-গিরায় ব্যাথা, পেশিতে ব্যথা, র্যাশ বা ফুসকুড়ি, বমিভাব ও দুর্বলতা।
আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও জিকার উপসর্গে মিল থাকতে পারে। ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে কিছু চিকুনগুনিয়ার রোগী পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ রোগী পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চলতি বছরে ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া রোগী অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে জানান, সাধারণত ২-৭ দিনের মধ্যে আক্রান্তদের লক্ষণ-উপসর্গ দেখা যায়।
তিনি বলেন, “সাধারণত অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা (বিশেষত হাত, কবজি, গোড়ালি, কাঁধ ও হাঁটুতে), মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, ক্লান্তি, ত্বকে ফুঁসকুড়ির মতো লক্ষণ দেখা যায়। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে। আর এই ব্যথা কয়েক সপ্তাহতো বটেই, কয়েক মাস কখনও কখনও সেটা বছর পর্যন্তও থাকতে পারে।
“এমনকি সেটা কয়েক বছরে গিয়েও ঠেকে। আবার কখনও কখনও অনেকের কোনও উপসর্গ প্রকাশ পায় না। তাই অনেকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলেও ডেঙ্গু অথবা জিকা ভাইরাসের সঙ্গে একে এক করে ফেলেন। মনে রাখতে হবে, চিকুনগুনিয়াতে অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।”
চিকুনগুনিয়া গুরুতর রোগ না হলেও ভোগায় অনেক বেশি জানিয়ে ডা. রাশেদুল হাসান বলেন, “মনে রাখতে হবে, যারা বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও শিশু-এ তিন শ্রেণির যেকোনো অসুখই সামান্য অসাবধানতায় গুরুতর হতে পারে। “সেইসঙ্গে যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত- যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনি সমস্যা অথবা লিভারের অসুখে আক্রান্ত তাদের বেলায় এটি গুরুতর হতে পারে।”