Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

বাল্যবিয়ে : এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

ss-child-marriage-bd-040324
[publishpress_authors_box]

বিশ্বে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়, সে তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল।

শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ‘গার্লস গোলস : হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার ৩০ ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৫১ দশমিক চার শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর হওয়ার আগে। এর ফলে কন্যাশিশু তথা মেয়েদের স্থায়ী দারিদ্র্যের চক্রে আটকে যেতে দেখা যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, তাদের সম্ভাবনার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক ঝুঁকিতে থাকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

বিশ্বজুড়ে শিশুবিয়ে ও অল্প বয়সে সন্তানধারণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০-২৪ বছর নারীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ নারী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দিচ্ছে। ১৫-১৯ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েদের ২৮ শতাংশ ১২ মাসের মধ্যে তাদের সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। ১৫-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের মধ্যে মাত্র ৪৭ শতাংশ জেনেবুঝে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাংলাদেশে কিশোরী কন্যাশিশুদের মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করার হার ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কিশোরী মেয়েদের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, দেশে কিশোরীদের এখনও প্রতিনিয়িত বৈষম্য, সহিংসতা, শিশুবিয়ে, শিক্ষার সুযোগের ঘাটতি এবং সুযোগ স্বল্পতার সাথে লড়াই করতে হচ্ছে।

১৯৯৯ বেইজিং ঘোষণায় যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ৩০ বছর পরে এসে সেসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশগুলো কতটা অগ্রগতি অর্জন করেছে, তার পর্যালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, মেয়েদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষায় বিনিয়োগের সুফল এসেছে। মেয়েদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। এখন কন্যাশিশুরা আগের তুলনায় তেমন একটা শিশুবিবাহের শিকার হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশ এখনও এই ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি কন্যাশিশু এই ক্ষতিকর চর্চার শিকার হচ্ছে, শিশুবিবাহের এই হার এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিশোরীরা সমবয়সী ছেলেদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে সঠিক বিনিয়োগের অভাবে।

উদাহরণ হিসেবে ইউনিসেফ বলেছে, সমবয়সী ছেলেদের তুলনায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী কিশোরী মেয়ে ও তরুণ নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের সুযোগ না পাওয়ার সংখ্যা এখনও দ্বিগুণ এবং স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই ইন্টারনেট সুবিধা পায় না।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, কোনও দেশই কিশোরী বয়সী মেয়েদের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি এসডিজি লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি। সে কারণে ২০৩০ এসডিজি এজেন্ডা অর্জনের জন্য আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি থাকায় এক্ষেত্রে নতুন করে গুরুত্ব আরোপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বেইজিং ঘোষণার ৩০ বছর পূর্তির সঙ্গে সঙ্গে আমরা নারী ও কন্যাশিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণে অগ্রগতিও উদযাপন করছি। তবে এই অগ্রগতি অর্জনের ধারা যে ধীরগতিসম্পন্ন, অমজবুত ও অস্থিতিশীল তাও স্বীকার করে নিচ্ছি।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এখনও অনেক কন্যাশিশু স্কুলে যায় না, তারা ক্ষতিকর চর্চা ও সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে।

তাদের সম্ভাবনার বিকাশের জন্য ‘অল-হ্যান্ডস-অন-ডেক’ এপ্রোচ অর্থাৎ এখন থেকেই সবাই মিলে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা আবশ্যক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে যে সাতটি দেশে কিশোরী মেয়ে ও তরুণ নারীদের ডিজিটাল দক্ষতার হার ২ শতাংশ বা তার চেয়ে কম সে সব দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে- কিশোরীদের বক্তব্যকে সবার সামনে তুলে ধরা এবং তাদের অ্যাডভোকেসিকে সহায়তা করা।

শিক্ষা, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণে বিশেষ করে ডিজিটাল শিক্ষায় যে ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।

তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কিশোরী মেয়েদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো পূরণে বিনিয়োগ করা। এক্ষেত্রে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত