গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার কড়া নিন্দা জানিয়েছে চীন।
দেশটি মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যেতে ইসরায়েলকে ‘কার্যকরভাবে সবুজ সংকেত’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।
অন্যদিকে খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের ভাষ্য, যুদ্ধ বন্ধে বিবদমান পক্ষের মধ্যে যে আলোচনা চলছে, প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব দেশগুলোর সমর্থন নিয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবটি তোলে আলজেরিয়া। মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। যুক্তরাজ্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে এর আগে উত্থাপিত দুটি খসড়া প্রস্তাবেও ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ভেটো দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, “যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির আহ্বান তোলার সময় এখন নয়।”
একই মত পোষণ করেন জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি বারবারা উডওয়ার্ড। তিনিও মনে করেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান আলোচনা হুমকির মুখে ফেলে আলজেরিয়ার উত্থাপিত প্রস্তাব তেমন একটা কাজে দেবে না।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করে জাতিসংঘে চীনের দূত ঝ্যাং জুন বলেন, “নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবটি বিবদমান পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করবে- যুক্তরাষ্ট্রের এই যুক্তি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।”
তিনি বলেন, “গাজায় যুদ্ধ বিস্তৃত আকার ধারণ করেছে। এটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ক্রমশ অস্থিতিশীল করে তুলছে। চলমান যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”
চীনের পাশাপাশি আলজেরিয়াও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তাদের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক আমার বেন্দজামা বলেন, “দুঃখজনকভাবে নিরাপত্তা পরিষদ আবারও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসে ব্যর্থ হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর নিন্দা জানায় তাদের মিত্র ফ্রান্সও। জাতিসংঘে ফরাসি দূত নিকোলা দ্যু রিভেয়ার আফসোস করে বলেন, “গাজার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখেও প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হলো না।”
ইসরায়েলের দক্ষিণে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলায় দেশটির ১ হাজার দুইশর বেশি মানুষ নিহত হয়। এদের অধিকাংশই বেসামরিক। একই সঙ্গে সেদিন ২৫৩ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ২৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ।