চীনের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফু এবং তার পূর্বসূরিকে দুর্নীতির অভিযোগে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা এবং আইন ভঙ্গের অভিযোগও আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এর মধ্য দিয়ে গত বছর থেকে শুরু হওয়া চীনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান আরও জোরদার হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং।
দুই মাস ধরে জনসম্মুখ থেকে উধাও হয়ে থাকার পরে গত অক্টোবরে লি শাংফুকে কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
লির রহস্যজনক অন্তর্ধান এবং মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাস পরই তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া নিয়ে তীব্র জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছিল।
তার আগে চীনের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের তত্ত্বাবধানকারী দেশটির সেনাবাহিনীর রকেট ফোর্সের দুই শীর্ষ জেনারেলকেও কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো চীনা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করল যে, লির নাটকীয় অন্তর্ধানের পেছনে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার চ্যানেল সিসিটিভির খবর অনুযায়ী, উচ্চ-স্তরের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে লি-র পূর্বসূরি ওয়েই ফেংহেকেও বৃহস্পতিবার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
লি এবং ওয়েই উভয়ই চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) সদস্য ছিলেন। সিএমসি শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী সংস্থা এবং এর প্রধান হিসেবে তিনিই চীনা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ আদেশ দাতা।
সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের একটি নিরাপত্তা ফোরামে তাকে শেষবার জনসমক্ষে দেখা যাওয়ার দুই দিন পর গত বছরের ৩১ আগস্ট থেকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ও আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের’ অভিযোগে লিকে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ তদন্তের অধীনে রাখা হয়।
সিএমসির কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশনের তদন্তে দেখা গেছে, লি রাজনৈতিক ও সংগঠনের শৃঙ্খলা ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছেন, তদন্ত প্রতিহত করেছেন, নিজের এবং অন্যদের জন্য ‘ব্যক্তিগত সুবিধা’ চেয়েছেন এবং অন্যদের ঘুষ দেওয়ার পাশপাশি নিজেও ঘুষ হিসেবে ‘বিশাল অর্থ’ নিয়েছেন।
সিসিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, “একজন জ্যেষ্ঠ দলীয় এবং সামরিক নেতা হিসেবে লি শাংফু তার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং পার্টির চেতনাগত মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।
“তার কর্মকাণ্ড দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তার উপর যে আস্থা স্থাপন ও দায়িত্ব অর্পণ করেছে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “তার ক্রিয়াকলাপ চীনের সামরিক খাতে রাজনৈতিক ও শিল্প পরিবেশকে মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত করেছে। দলসহ জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং সামরিক বাহিনীর বিকাশ এবং সিনিয়র নেতৃত্বের ভাবমূর্তির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে।
“তার অসদাচরণের প্রকৃতি অত্যন্ত গুরুতর, প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকারক, এবং বিশেষ করে ফলাফল গুরুতর।”
২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লি-র পূর্বসূরি ওয়েইও রাজনৈতিক ও সাংগঠনকি শৃঙ্খলা, তদন্ত প্রতিরোধ, ঘুষ, সেইসঙ্গে ‘বিশ্বাসের পতন এবং আনুগত্য হারানোর’ গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন।
তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো চীনের সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং উন্নয়নে ব্যাপক দুর্নীতি সংঘটনের দিকে ইঙ্গিত করে। সম্ভবত রকেট ফোর্সের উপর ফোকাস করেই এই উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চীনের সেনাবাহিনীকে ‘আধুনিকীকরণ’ এবং ‘বিশ্বমানের’ যোদ্ধা বাহিনীতে রূপান্তরের জন্য শির প্রচেষ্টার কেন্দ্রে ছিল এই উদ্যোগ। আর তাতেই দুর্নীতি হওয়ায় শি এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হওয়ার আগে লি পাঁচ বছরের জন্য চীনের সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ছিলেন। আর ওয়েই ২০১৫ সালের শেষে রকেট ফোর্সের উদ্বোধনী কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৮ সালে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী করা হয়।
গত গ্রীষ্ম থেকে চীনের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সে এক ডজনেরও বেশি উচ্চ-স্তরের সামরিক কর্মকর্তা এবং মহাকাশ নির্বাহীকে বহিষ্কার করা হয়।
২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শি জিন পিং দুর্নীতি এবং আনুগত্যহীনতার মূলোৎপাটনকে তার শাসনের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
তথসূত্র : সিএনএন ও সিনহুয়া