বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছিল যার গ্রেপ্তার হওয়া, সেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী হাই কোর্ট থেকে জামিন পেলেও তা আটকাতে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
বুধবার হাই কোর্ট জামিন দেওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ তা স্থগিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির কাছে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে।
চেম্বার জজ বিচারপতি মো. রেজাউল হক প্রথমে হাই কোর্টের রায় স্থগিতের আদেশ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে আগামী রবিবার শুনানির তারিখ ঠিক করেন।
চিন্ময়ের জামিন প্রশ্নে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে বুধবার দুপুরে রায় দিয়েছিল বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাই কোর্ট বেঞ্চ।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় জামিন চেয়ে আবেদন করলে তার শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেছিল। তাতে চিন্ময়কে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
গত ২৩ এপ্রিল হাই কোর্ট রুলের শুনানির জন্য ৩০ এপ্রিল তারিখ রাখে। বুধবার শুনানি নিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় হলো।
ফলে ছয় মাস পর চিন্ময়ের মুক্তির পথ খুললেও তা আবার আটকে যায় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদেশে।
রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের আবেদন নিয়ে গেলে সন্ধ্যায় চেম্বার জজ তা স্থগিত করে দেন । পাশাপাশি হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্ধৃত করে ঢাকা পোস্ট জানিয়েছে, হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপি প্রকাশ ও নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের না হওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে কিছুক্ষণ পরই স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হয় বলে টিবিএস নিউজ জানিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, চেম্বার বিচারপতি আগামী রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানির দিন ঠিক করেছেন।
চিন্ময় ব্রহ্মচারীর প্রকৃত নাম চন্দর কুমার ধর। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে (ইসকন) যোগ দেওয়ার পর তিনি নতুন নাম নেন। চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রচারের আলোয় আসেন চিন্ময়।
তখন বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলে তার প্রতিবাদে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে সমাবেশ হয় ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে। ওই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ও মুখপাত্র ছিলেন চিন্ময়।
এরপর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ গঠন করলে তার মুখপাত্র হন চিন্ময়।
এরপর ২৫ অক্টোবরের সমাবেশে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা করেন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। গত বছরের ৩১ অক্টোবর করা সেই মামলায় চিন্ময়সহ মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
সেই মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রামের আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে তার সমর্থকরা চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। সেই সংঘর্ষের মধ্যে এক আইনজীবী নিহত হলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
চট্টগ্রামের আইনজীবীরা চিন্ময়ের পক্ষে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে তার জামিন শুনানি আটকে যায়। পরে ঢাকা থেকে আইনজীবী গিয়ে জামিনের আবেদন করলেও চট্টগ্রামের আদালত তাকে জামিন দেয়নি।
এদিকে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে যে টানাপড়েন চলছিল, তা আরও নাজুক হয় চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পর।
ভারত সরকার চিন্ময়কে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়। দেশটিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে সরব হন। তারমধ্যে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য ত্রিপুরায় এক সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলাও হয়।
অন্যদিকে যার মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই ফিরোজ খানকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিএনপি।
আবার চিন্ময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ইসকন জানায়, তারা তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে।