বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য নতুন দিন ঠিক করেছে আদালত।
আগামী মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এই শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানহর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মফিজুর রহমান।
এর আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ঠিক থাকলেও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির আদালত বর্জন কর্মসূচির কারণে জামিন শুনানি হয়নি। রবিবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। এরপর থেকে এই নেতা চট্টগ্রাম জেলা কারাগারেই রয়েছেন।
সেদিন আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান আটকে রেখে বিক্ষোভ করে চিন্ময় কৃষ্ণের ভক্ত-অনুসারিরা। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে, লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং চিন্ময় কৃষ্ণ কারাগারে নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে চিন্ময়ের অনুসারীদের সংঘর্ষও হয়।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই আদালতের কাছের সেবক কলোনীর কাছে উদ্ধার হয় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীর লাশ। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
সেই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে আইনজীবী সাইফুলের পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে একটি হত্যা মামলা। এছাড়া পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় আলাদা তিনটি মামলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকেও হয়েছে আরেকটি মামলা।
এসব মামলায় অন্তত দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ৫০ জনকে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আসল নাম চন্দর কুমার ধর। যতদূর জানা যায়, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে (ইসকন) যোগ দেওয়ার পর তিনি নতুন নাম নেন। চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে তার অনুসারীরা ‘চিন্ময় প্রভু’ বলে ডাকেন।
বাংলাদেশে ইসকনের মুখপাত্রের ভূমিকায় কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত তিনি।
গত আগস্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলে তার প্রতিবাদে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে সমাবেশ হয় ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে। ওই সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ও মুখপাত্র ছিলেন চিন্ময়।
এরপর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময়কে।
২৫ অক্টোবরের সেই সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়।
সেই মামলায় চিন্ময়সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(খ), ১২৪(ক), ১৫৩(ক), ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলায় চিন্ময়ের পাশাপাশি চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্তসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
এরমধ্যে ঢাকায় এসেছিলেন চিন্ময়। চট্টগ্রামে ফেরার পথে সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে তাকে তুলে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার চিন্ময়কে আদালতে তোলা হয়। আদালতে জামিন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম।