টানা ১২ দিন বন্ধ থাকার পর চলাচল শুরু করেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেন। বুধবার সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে শতভাগ যাত্রী (৭০৫ জন) নিয়ে ট্রেনটি রওনা হয়। সেটি সকাল ১০টা ২০ মিনেটে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে পৌঁছায় বলে নিশ্চিত করেছেন স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানি।
তিনি আরও জানান, স্পেশাল ট্রেনটি সন্ধ্যা ৭টায় যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম রওনা হয়ে রাত ১০ টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছবে। এই স্পেশাল ট্রেন ঈদের পরবর্তী এক সপ্তাহ বা ২৪ জুন পর্যন্ত চলাচল করবে।
গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে স্পেশাল ট্রেনটি চালু করেছিল রেল বিভাগ। ইঞ্জিন ও লোকো মাস্টার সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে গত ২৯ মে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বাস মালিকদের চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
কারণ ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় বাস কোম্পানিগুলো যাত্রী হারাচ্ছিল। তাতে বাস মালিকদের ভাড়া কমাতেও হয়েছিল। রেলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যাতায়াতকারীরা।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর পর গত রোজার ঈদে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ এই ট্রেন চালায় রেল বিভাগ। গত ৮ এপ্রিল থেকে চালু হওয়া এই ট্রেন গত বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যাতায়াতে সড়কই ছিল একমাত্র পথ। বিমান ও নৌ যোগাযোগ নেই পাশাপাশি দুই জেলায়। সময় ও অর্থ সাশ্রয়, নিরাপদ এবং আরামদায়ক- এসব বিবেচনায় ট্রেনের এই স্পেশাল সার্ভিস লুফে নেয় যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে সড়কপথে ১৪৫ কিলোমিটার দূরত্ব বাসে পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা। যানজটে সেই সময়ও বাড়ে। খরচ হয় নন এসি বাসে ৪২০ টাকা, এসি বাসে প্রায় ১ হাজার টাকা।
বিপরীতে ট্রেনে নন এসি শোভন চেয়ারের ভাড়া ২৫০ টাকা, এসি স্নিগ্ধা চেয়ারের ভাড়া ৪৭০ টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
ঢাকা থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটে যাতায়াতের জন্য দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু আছে। একটি কক্সবাজার এক্সপ্রেস, আরেকটি পর্যটক এক্সপ্রেস। সেই দুটি ট্রেনে ঢাকা থেকে সাড়ে ১৫শ যাত্রী চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ থাকলেও চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৩০টি সিট।
অর্থাৎ প্রতিদিন চট্টগ্রামের ২৩০ যাত্রী এই দুটি ট্রেনে চড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। শতাংশের হিসাবে যা মাত্র ১৫ ভাগ। সেই দুটি ট্রেনে এত কম যাত্রী বরাদ্দ থাকায় চট্টগ্রামবাসীকে সেটি টানেনি। ফলে সেই ট্রেন চট্টগ্রামের যাত্রী পায়নি।
গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাতায়াতের জন্য কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। পরে যাত্রী চাহিদা দেখে সেই ট্রেনের সময় বাড়ানো হয়।
৮ এপ্রিল চালু হওয়া এই ট্রেন থেকে ৫ মে পর্যন্ত মোট ২৫ দিনে ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৩৬২ টাকার রাজস্ব আয় হয় বলে হিসাব পাওয়া গেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে। অর্থাৎ দিনে গড়ে আয় ২ লাখ টাকার বেশি।
অথচ চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে মহানগর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি এপ্রিল মাসের ৩০ দিনে আয় করে ৫০ লাখ টাকা। রাজস্ব আয় কম হলেও মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন চালু রাখা হয়, আর বন্ধ করা হয় কক্সবাজারের বিশেষ ট্রেনটি।
তখন বাস মালিকদের ‘প্রেসক্রিপশনে’ কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে অভিযোগ করে বিবৃতি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীরা যখন এই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করছিলেন, তখন বাস মালিকেরা একে একে সব পরিবহনে যাত্রী সংকট দেখা দিলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রী প্রতি বাস ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত কমিয়ে আনে। এরপরই বন্ধ ঘোষণা করা হয় এই সার্ভিসটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ মে প্রথম বাসভাড়া কমায় সৌদিয়া পরিবহন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত তাদের সরাসরি বাসভাড়া ছিল নন এসি ৪২০ টাকা; এখন তা ৩৩০ টাকা। পুরবী পরিবহনও ভাড়া কমিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভাড়া ৩২০ টাকা বিক্রি করছে।
এই নিয়ে আলোচনার-সমালোচনার মধ্যেই ১২ দিন পর আবার স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে।
ট্রেনের যাত্রী চাহিদা সামাল দিয়ে রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে ২১ মে থেকে ট্রেনটির কোচের সংখ্যা ৫টি বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়। এতে ট্রেনটির যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ৪৩৮ জন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০৫ জনে। ফলে রাজস্ব আয় আরও বেড়ে যায়।
এই অবস্থায় ট্রেনটিকে স্থায়ী রূপ দিতে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। সেই প্রস্তাবে এই ট্রেনকে দুই ট্রিপ অর্থাৎ দিনে দুবার যাতায়াতের সুপারিশ ছিল। আর ১০ বগির পরিবর্তে ১৮টি বগি দিয়ে চালানোর প্রস্তাব ছিল; যাতে একসঙ্গে ৮৫০ যাত্রী চলাচল করতে পারত।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানি বলেন, ভবিষ্যতে এই ট্রেনের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়বে। ট্রেনের সংখ্যাও বাড়তে পারে। যাত্রীসেবার মান কীভাবে আরও বাড়ানো যাবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বেশ আন্তরিক।