শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চট্টগ্রামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এসময় বাড়ির গ্যারেজে থাকা গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় নগরীরর দুই নম্বর গেইটের চশমা হিল এলাকার মেয়র গলিতে চট্টগ্রামে সাবেক মেয়র ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষামন্ত্রী মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে।
হামলার সময় মহিবুল হাসান চৌধুরী বাসায় না থাকলেও তার মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ছিলেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। আন্দোলনকারীরা চট্টগ্রাম নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি টাইগারপাস এলাকায় পৌঁছলে সেখানে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়।
পরে আন্দোলনকারীদের মিছিলটি নগরীর দুই নম্বর গেইট হয়ে মুরাদপুর যায়। সন্ধ্যার দিকে মিছিলের একটি অংশ চশমা হিলের মেয়র গলির দিকে এগিয়ে যায়।
এরপর সেখানে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা। এতে দুই তলা বাড়িটির কাঁচের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে হামলাকারীরা বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে নিচে রাখা দুটি গাড়িও ভাঙচুর করে।
এছাড়া আর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রীর মা হাসিনা মহিউদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি এবং পরিবারের সদস্যরা তখন নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখনই আমাদের বাসায় আক্রমণ হয়। ইট, পাথর মেরে আমাদের বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে। দুইটা গাড়ি বাসার সামনে রাখা ছিল। সেগুলো ভাঙচুর করেছে। তবে ভবনের প্রধান গেইট বন্ধ থাকায় বাড়ীর ভিতর ঢুকতে পারেনি হামলাকারীরা।”
মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলার খবর শুনে দ্রুত সেখানে ছুটে যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছিলেন প্রতিবেশিরাও। হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সেখানে উপস্থিত ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, “এই বাড়ি চট্টগ্রামবাসীর আবেগের জায়গা। সেই বাড়িতে হামলা হলো। জামাত-শিবির যে এই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে অরাজকতা তৈরি করেছে সেটি আবারও প্রমাণ হলো।”
স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করত চাইছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকেই নগরীর ওয়াসা মোড় এলাকায় পেট্রোল পাম্পের পাশে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অফিসটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘটনাস্থল গিয়ে দেখা যায়, অফিসটির দপ্তর সেলে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ভাঙচুর করা হয়েছে চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য সামগ্রীও। কার্যালয়ের প্রধান ফটক ও ভেতরের কক্ষগুলোয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্নও দেখা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, “শিক্ষমন্ত্রীর বাড়িতে আমাদের একটি টিম গিয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নিউমার্কেট থেকে বহদ্দারহাটের দিকে যাওয়ার পথে কয়েকটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে।”
নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের বসানো সিসি ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ। তিনি বলেন, “আমাদের বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি টাইগারপাস মোড়ে শেষ হয়েছে। পরের ঘটনার জন্য আমরা দায়ী নই।”