বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মিছিল-এসব নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে গেছে এখন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নানা দাবিতে রাস্তায় নেমে আসছে মানুষ। চট্টগ্রামে প্রতিবাদ জানাতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগই নেয় ‘হকি কেন্দ্র’। অনিয়মিত লীগ, প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া আর নানা ভাবে বৈষম্যের শিকার হওয়ায় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ট্রেনিং মাঠে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তারা শুরু করেছিল ৩ ম্যাচের হকি সিরিজ।
হকি কেন্দ্র নিজেরাই তিনটি দল গড়ে খেলে এই সিরিজ। প্রতিটি ম্যাচের আগে ব্যানারে নানা স্লোগান লিখে আর মাঠ প্রদক্ষিণ করে নিজেদের দাবি জানাতে থাকে তারা।
ব্যানারগুলোতে লেখা ছিল , ‘অবিলম্বে চট্টগ্রামে হকি লীগ চালু কর, করতে হবে’, ‘দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তিন প্রধান খেলার একটি হকি, তারপরও চট্টগ্রামে অবহেলিত কেন জবাব চাই’, জাতীয় পর্যায়ে সেরা ১০ এ চট্টগ্রাম হকি, তারপরও বৈষম্য কেন জবাব চাই’।
হকি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কোচ মহসিনুল হক চৌধূরী এ নিয়ে সকাল সন্ধ্যাকে বললেন, ‘‘এই প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ নতুন নয়। চট্টগ্রামে আমরা ’৮০ দশক থেকে হকির জন্য আন্দোলন করে আসছি। তারপরও একটা টার্ফ পেলাম না। এখানে লিগ হয়, তবে সেটা নিয়মরক্ষার। একই কর্মকর্তা কখনও হকি কমিটিতে আসছেন, কখনও ফুটবল, ক্রিকেট তো ভলিবলে। আবার একই খেলোয়াড় খেলছেন ভলিবল, হকি, ফুটবল, কাবাডি ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টে। এরই প্রতিবাদে আমরা তিন ম্যাচের সিরিজ খেলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি।’’
হকির ঢাকা প্রিমিয়ার লিগই এখন অনিয়মিত। কয়েক বছর বিরতি দিয়ে হয় এই টুর্নামেন্ট। দেশের হকি পিছিয়ে পড়ছে তাই। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামেও অবহেলিত হকি, আর এটাই হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারণ ‘হকি পাগল’ হিসেবে খ্যাত মহসিনুল হক চৌধূরীর।
আশির দশকে ঢাকার হকি লিগে জুম্মন লুসাই, খাজা রহমতউল্লাহদের সঙ্গে খেলেছেন মহসিনুল। ১৯৮২ সালে যুব দলের হয়ে খেললেও জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। তবে তারই উদ্যোগে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় হাকি কেন্দ্র। নগরীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতি বছর একটা লীগের আয়োজন করেন তিনি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মহসিনুল হকের বন্ধু আর সাবেক খেলোয়াড়রা।
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্ট শুরু করলেও, চট্টগ্রামে হকি কেন্দ্র স্কুল হকি লীগ আয়োজন করে এর দুই বছর আগে। এবার চলছে সেই লিগের ২৬তম আসর।
টানা লিগ করার সুফলও মিলেছে। হকি কেন্দ্রের অধীনে খেলাটা শিখে এখন জাতীয় দলে খোরশেদুর রহমান, রাজিব দাস ও আমান শরীফ। মেয়েদের জাতীয় দলে আছেন হকি কেন্দ্রের হিমাদ্রী বড়ুয়া সুখ, নীলাদ্রি বড়ুয়া নীল ও ফাতেমাতুজ জোহরা কেয়া। বিকেএসপিতেও সুযোগ পেয়েছেন অনেকে।
জাতীয় স্কুল হকিতে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চট্টগ্রামের জে এম সেন হাইস্কুল। ২০০০, ২০০১ ও ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্কুলটি অবশ্য কলেজিয়েট হয়ে গেছে এখন।
প্রতিষ্ঠার পর সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের সাতটি স্কুলে প্রশিক্ষণ দিয়েছে হকি কেন্দ্র। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে চারে। এ নিয়ে মহসিনুল হকের আফসোস, ‘‘ক্লাশ সেভেনের পর অভিভাবকরা বাচ্চাদের ছাড়তে চান না। হকিতে ভবিষ্যৎ নেই বলে কেউ ক্রিকেটে পাঠিয়ে দেন। আমি দমে যাই না। প্রতিদিনই আউটার স্টেডিয়ামে সকালে ২০-২৫ জনকে কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করিয়ে হকি শেখাই। আমার দাবি চট্টগ্রামে একটা টার্ফ আর খেলার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ। তাহলেই আর হকি বাঁচাতে প্রতিবাদ করতে হবে না কাউকে।’’