আওয়ামী লীগের শাসনকালে প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক দখল করে লক্ষ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার তদন্ত শুরু হলো।
তাদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরুর খবর দিয়ে শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তাতে বলা হয়েছে, সাইফুল আলমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এস আলমসহ কারা কারা এমন লুটপাট চালিয়েছিল, তা বের করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এই প্রক্রিয়া চলার মধ্যে গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এস আলম ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছেন। এমন সুপরিকল্পিতভাবে পৃথিবীতে কেউ ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না, তা জানা নেই।”
এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করেই গ্রুপটির মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
এরপরই তার বিরুদ্ধে ওঠা টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করার কথা জানালো সিআইডি।
সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে মাত্র একদিনের ব্যবধানে আবার বাংলাদেশে পিআর (স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি) নিয়েছেন। এরপর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ কিনেছেন ও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন।
পাচার করা অর্থে সিঙ্গাপুরে প্রায় ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘ক্যানালি লজিস্ট্রিক প্রাইভেট লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়া ভুয়া নথি তৈরি, জাল জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের জন্য নামে-বেনামে ৬টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে শেল কোম্পানি (নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে পাচার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রাথমিকভাবে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে এস আলমের সঙ্গে তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাই মানিলন্ডারিং আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে সিআইডি।