ঝিনাইদহের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে জমা দিয়েছে কলকাতার অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এই হত্যাকাণ্ডে প্রথম আসামি গ্রেপ্তারের ৮৭ দিনের মাথায় শনিবার বারাসাত আদালতে ১২শ’ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেওয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
সিআইডি সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার্জশিটে গ্রেপ্তার হওয়া ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার ও মোহাম্মদ সিয়ামের নাম আছে। তবে কেন আনারকে হত্যা করা হয়, সে ব্যাপারে চার্জশিটে কিছু বলা হয়নি।
এর ব্যাখ্যায় তদন্তকারীদের একাংশ বলছে, তদন্ত শেষ না হলে হত্যাকাণ্ডের কারণ বলা যাবে না। তাছাড়া মামলার মূল অভিযুক্তকে এখনও জেরা করা যায়নি বলেও জানিয়েছেন তারা।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনার গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়ার পরদিনই কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ২২ মে জানায়। তার লাশের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলছে, হত্যার পর আনারের দেহ খণ্ড খণ্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে।
আনার হত্যায় ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সন্দেহভাজন আসামি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি স্বীকারোক্তি না দিলেও অন্য ছয় আসামি শিমুল ভুইয়া, তার ভাতিজা তানভির ভূইয়া, শিলাস্তি রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান ফকির, ফয়সাল আলী সাহাজী ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে জমা হয়েছে।
ওদিকে, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার সেখানে রয়েছেন। নেপালে আত্মগোপনে থাকা সিয়াম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর কলকাতায় নেওয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে পলাতক আছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন। তিনিই এই খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে দাবি করে আসছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কলকাতার সিআইডি তাকে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ভারতে আনার চেষ্টা করছে বলে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এদিকে, জিহাদ ও সিয়ামকে গ্রেপ্তার করার পরে কলকাতার সিআইডি জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডের পর আনারের দেহের মাংস ও হাড় পৃথক করা হয়। মাংস ছোট ছোট খণ্ড করে কমোডের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয় সেপটিক ট্যাঙ্কে। আর হাড় নিয়ে ফেলা হয়েছিল ভাঙড়ের কাছে বাগজোলা খালে।
ইতোমধ্যে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মাংসের খণ্ড এবং বাগজোলা খাল থেকে মানুষের হাড়গোড় উদ্ধার করা হলেও ফরেনসিক প্রতিবেদন এখন না আসায় সেগুলো আনারের কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কলকাতার সিআইডি বলছে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আনারের পরিবারের কারও ডিএনএ নমুনা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে তাদের কেউ কলকাতা যেতে পারেননি।