জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার; নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এই দলটির সহযোগী সংগঠনকেও।
বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা থেকে ‘সন্ত্রাসী’ দল হিসাবে জামায়াতকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানোর পর জামায়াত নির্বাচন করতে না পারলেও রাজনৈতিক দল হিসাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছিল। এখন সেই পথও বন্ধ হয়ে গেল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন রায় এবং নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের উল্লেখও করা হয়।
এরপর বলা হয়, “যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল এবং যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে।
“সেহেতু সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।”
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ‘নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তালিকাভুক্তকরণ’ শিরোনামের ১৮ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত যে কোনও ব্যক্তি বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে সরকার।
বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনও অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোনও সত্তা বা কোনও ব্যক্তিকে কোনও কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে কিছু কাজকে আইনটিতে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
তবে এই আইন ব্যবহার করে সরকার যেমন প্রজ্ঞাপন দিয়ে কোনও ব্যক্তি কিংবা দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তেমনি তা প্রত্যাহারও করে নিতে পারে; যা আইনের ১৮ অনুচ্ছেদেরেই দ্বিতীয় ধারায় বলা আছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার পাশাপাশি বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে নামা জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি দেশে দীর্ঘদিনের।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের সময় দাবিটি জোরাল হয়ে উঠেছিল। পরে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে তা আরও জোর পায়।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করার পর দল হিসাবে তাদের বিচারের দাবিও উঠেছিল শাহবাগ আন্দোলন থেকে।
সেই বিচারের পথ তৈরি করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা আওয়ামী লীগ সরকার বললেও এক দশকেও তা হয়নি।
এর মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে দলটিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আসে।
এরপর নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। নির্বাহী আদেশে দলটিকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পর দুদিনে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নথি চালাচালির পর প্রজ্ঞাপন আসে।
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
১৪ দলের সভায় জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আসার পরই দলটি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি পাঠিয়েছিল। বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারির পর জামায়াত আমির শফিকুর রহমান ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি পাঠান।
তিনি বলেন, “সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিশ্বসম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে।
“সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশ বলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।”
জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ ও নৈরাজ্যবাদের কোনও সম্পর্ক নেই দাবি করে শফিকুর বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরিকদের সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির।
জামায়াতকে কীভাবে মোকাবেলা করবে সরকার
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসের চেষ্টা করবে’ বলে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রজ্ঞাপন জারির কিছুক্ষণ আগে ঢাকায় কৃষক লীগের এক সমাবেশে তিনি বলেন, “এরা তো জঙ্গিবাদী হিসাবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সেখানেও জঙ্গি সংগঠন হিসাবে এদেরকে মোকাবেলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সকলে মিলে করতে হবে।”
জামায়াত নিষিদ্ধের পর এর নেতা-কর্মীদের কী হবে- এই প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “গণহারে তাদের বিচার করা হবে না।
“১৯৭১ সালের পরে যারা জন্ম নিয়েছে, তাদের বিচার করা হবে না। বাংলাদেশে আইন আছে, তারা যদি কোনও অপরাধ করে, সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিচার হবে।”
জামায়াতের বিচারের কী হবে
নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই- এই কথাটি এক বছর আগেও বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিচার করা হবে দলটির। সংশোধিত আইনের খসড়া শিগগিরই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।
বর্তমান আইনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে শুধু ব্যক্তির বিচারই করতে পারছে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু দলের বিচার করার সুযোগ নেই। সেজন্যই আইন সংশোধন করতে হবে।
সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বিভাগে জমা দেয়। এরপর তৎকালীন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে প্রধান করে সাত সদস্যদের একটি প্রসিকিউশন দলও গঠন করা হয়েছিল।
কিন্তু আইন সংশোধন না হওয়ায় তা আর বিচারে গড়ায়নি।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটার তুরিন আফরোজ দুদিন আগেই সকাল সন্ধ্যাকে বলেছিলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করতে চাইলে বিচারের মাধ্যমে তা করা উচিৎ।
“আমরা যদি মনে করি জামায়াতের আদর্শটাই ঠিক না, দেশবিরোধী, তাহলে কিন্তু ট্রাইব্যুনালে মামলা নিয়ে বিচারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।”
নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “সেখানে দলের শীর্ষনেতাদের বিচার হয়ে ফাঁসি হয়েছে। আবার কতগুলো সংগঠনেরও বিচার হয়েছে। একই সাথে তারা যেটি করেছে সেটা হলো-দীর্ঘ সময় ধরে সমূলে উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছিল সেখানকার সরকার।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক তুরিন আফরোজ বলেন, “নির্বাহী আদেশে জামায়াত কেন, যে কোনও সংগঠনকে যে কোনও সময় নিষিদ্ধ করতে পারে সরকার।
“এখন আমার বক্তব্য হলো- নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ করা হলে আসলে কী হবে? অন্য সরকার আসলে আবার জামায়াত আসবে। এতে কিন্তু সমস্যাটা সমাধান না।”
সরকারের এই পদক্ষেপ যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে জামায়াতের বিচারের পথ আটকে দেবে কি না- এপ্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, “নিষিদ্ধ করলেও আদালতে শাস্তি দেওয়া যাবে না, এমনটি নয়। যেহেতু ব্যান হয়ে গেছে, তাই হয় তো আর ব্যান করার ব্যাপারটা আর সাজার মধ্যে আসবে না।”
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে ইমরান এইচ সরকার এক বিবৃতিতে জামায়াত নিষিদ্ধের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “কিন্তু সরকারের দীর্ঘ কালক্ষেপণের প্রক্রিয়া দেশকে যে অরাজকতার প্রান্তে দাঁড় করিয়েছে, তার ভুক্তভোগী হচ্ছে জনগণ।
“২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশন যখন যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল, তখন তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে তা আরও কার্যকর হতো।”
বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ জামায়াত
বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি তুরীন আফরোজও তুলে ধরে বলেন, “নির্বাহী আদেশে কিন্তু ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকার একবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল।”
একাত্তরে বাংলাদেেশর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জামায়াতের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ভূমিকার বিষয়টি আলোচিত।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মীয় সব দল নিষিদ্ধ করলে জামায়াতও সেই কাতারে পরে নিষিদ্ধ হয়। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়, তাতে পুনর্বাসিত হয় জামায়াত।
জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াত সক্রিয় ওঠার পর এইচ এম এরশাদের আমলে দলটি সংসদেও আসন নেয়। এরপর ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রীও করা হয় দলটির দুই নেতাকে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াকে একাত্তরের লাখো শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ বলে পরে মন্তব্য এসেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলার এক রায়ে। ওই দুজন পরে যুদ্ধাপরাধে দোষি সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে এরশাদ আমলে ফিরলেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর আমিরের দায়িত্ব নেন।
তার প্রতিবাদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে উঠলে সেখান থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জোরাল হয়ে ওঠে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিলে একে একে ধরা পড়েন জামায়াতের শীর্ষনেতারা। বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয় দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদসহ কয়েকজন শীর্ষনেতার। গোলাম আযম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাভোগের মধ্যে মারা যান।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলন থেকে জামায়াত এবং দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের দাবি আবার জোরেশোরে ওঠে।
এর মধ্যেই উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারায় ২০১৩ সালে। তখন থেকে তারা দলীয়ভাবে কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিল না। এখন নিষিদ্ধই হলো দলটি।
১৯৮৬ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদে জামায়াত ছিল। ২০০৮ সালের সংসদে দুটি আসনে জিতেছিল তারা। এরপর আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।
মওদুদীর জামায়াত পাকিস্তানেও হয়েছিল নিষিদ্ধ
অখণ্ড ভারতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা হলেও পাকিস্তানকে ভিত্তি করে এগিয়েছে দলটি। তবে সেই দেশেও একাধিকবার নিষিদ্ধ হয়েছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে অন্তত দুই বার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর মৃত্যুদণ্ডও হয়েছিল সামরিক আদালতের রায়ে, যদিও তাকে সেই শাস্তি ভোগ করতে হয়নি।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট। মওদুদীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দলটির নাম তখন ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ।
মওদুদীর জন্ম বর্তমান ভারতের মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ শহরে। তার পড়াশোনার শুরু মাদ্রাসায়। কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বেশি দূর না এগোলেও ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল তার।
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তি ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে গিয়ে জামায়াতের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে থাকেন মওদুদী। ইসলামী ভাবাদর্শে দল গঠনকারী মওদুদী ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কুফল হিসাবে দেখতেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে ইসলামী সংবিধান ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলে ১৯৪৮ সালে গ্রেপ্তার হন মওদুদী। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর ১৯৪৯ সালে মওদুদী মুক্তি পান এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি।
এরপর মওদুদীর নেতৃত্বে আহমদিয়াদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণার দাবি ওঠে। তা কেন্দ্র করে লাহোরে দাঙ্গা বাধে। তাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ২ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
সেই ঘটনায় সামরিক আদালতে মওদুদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছিল। কিন্তু সে রায় আর কার্যকর হয়নি। প্রথমে মৃত্যুদণ্ডের সাজা লঘু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, পরে দণ্ড মওকুফ করে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক হিসেবে আইয়ুব খান ক্ষমতা নেওয়ার পর সব ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। তাতে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল।
আইয়ুব খানের আমলে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করে পরিস্থিতি নাজুক করার চেষ্টা চালালে ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়।
পাকিস্তানের দৈনিক ডনের সূত্রে জানা যায়, তখন নির্বাহী আদেেশ ‘বেআইনি সংগঠন’ হিসাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
নিষিদ্ধের আদেশে বলা হয়েছিল, জামায়াত ও দলটির নেতারা রাষ্ট্রীয় সংহতি ও ঐক্য বিনষ্টের কাজে সক্রিয় ছিেলন। রাষ্ট্রের শত্রুদের কাছ থেকে দলটির অর্থ নেওয়ার প্রমাণও রয়েছে।
১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের সরকার মওদুদীকে আবার কারাগারে পাঠালেও পরে মুক্তিও দেওয়া হয় তাকে। মওদুদী ৭৫ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে যৃুক্তরাষ্ট্রে মারা যান।
পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসাবে এখনও সক্রিয় আছে। তবে তাদের প্রভাব দিন দিনই কমছে। এই বছরের শুরুতে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৪৩টিতে প্রার্থী দিলেও একটি আসনেও জিততে পারেনি দলটি।