Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

সকালের ঢাকায় উত্তেজনা শাহবাগে

বিএসএমএমইউতে ভাঙচুর করার পাশপাশি কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিএসএমএমইউতে ভাঙচুর করার পাশপাশি কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে রবিবার সকালে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশের দেখা মিললেও শাহবাগে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ মানুষকে লাঠিসোঁটা হাতে শাহবাগে অবস্থান নিতে দেখা যায়। ওই সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এক পর্যায়ে শাহবাগ থেকে কয়েকশ’ মানুষ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা হাসপাতালে ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় লাঠিসোঁটা হাতে তাদের ধাওয়া দেওয়া লোকজন হাসপাতালের গেটে ভাঙচুর চালায়।

এ সময় হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে তারাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

বিএসএমএমইউতে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।

এক পর্যায়ে হাসপাতালে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

এ সময় শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেলেও সংঘর্ষ ঠেকাতে তাদের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি।

বিএসএমএমইউর মিডিয়া সেলের সদস্য সুব্রত বিশ্বাস সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে ও আগুন দেওয়া হয়েছে।

তবে কারা এই ভাঙচুর করেছে এবং আগুন দিয়েছে সেটা তিনি বলতে পারেননি।

সুব্রত বলেন, ডি ব্লকের ভেতর রাখা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোটরসাইকেলে আগুন লাগানো হয়েছে। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

শাহবাগে দুইপক্ষ মুখোমুখি হওয়ার আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। এছাড়া শহীদ মিনার ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়ও অবস্থান নিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।

অন্যদিকে ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

পোস্তগোলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

ঢাকার অন্যত্র পরিস্থিতি শান্ত

শাহবাগে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলেও ঢাকার অন্যত্র সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশই দেখা গেছে। সকাল থেকে ঢাকার বেশিরভাগ সড়কে যানবাহন চলছে সীমিত আকারে। রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাই চলাচল করছে বেশি। কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশার দেখা মিললেও বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ির দেখা তেমন মিলছে না।

রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হলেও অন্যান্য সময়ের মতো এদিন সকাল থেকে সড়কে কর্মমুখী মানুষের দেখাও মিলেছে কম। অনেক এলাকায় দোকান-পাটও বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে কয়েকটি এলাকা বাদে ঢাকার সড়কগুলোতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

সকাল ১০টার দিকে মহাখালীতে সড়কে বাস একেবারেই ছিল না বলা যায়। দুটি মাত্র বাস দেখা গেছে ১৫ মিনিটে, একটি বলাকা পরিবহনের, যেটি গাজীপুর থেকে আসছিল, আরেকটি বৈশাখী পরিবহনের, সেটা আসছিল সাভার থেকে।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে লাঠিসোঁটা হাতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

সড়কে অটোরিকশা থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি খুবই কম। রিকশা রয়েছে প্রচুর। তবে অফিস খোলার দিনে যে পরিমাণ মানুষের ভিড় মহাখালীতে হয়, তা ছিল না।

পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছিল না সকালে। আওয়ামী লীগের কোনও জমায়েতও ছিল না সাড়ে ১০টা নাগাদ।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বনশ্রী এলাকার সড়কে যানবাহন অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ কম ছিল। গণপরিবহন ছিলই না বলা যায়। অফিসমুখী কর্মজীবী মানুষের উপস্থিতিও সড়কে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ দোকানপাট ছিল বন্ধ।

হাতিরঝিল এলাকায় রামপুরা বাসস্ট্যান্ডে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের ভিড় ছিল। গণপরিবহন না থাকায় এসব অটোরিকশা আর মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মজীবীদের অফিস যেতে দেখা গেছে।

গুলশান-১ ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির (প্রাইভেটকার) সংখ্যাও ছিল বেশ কম।

বিজয় সরণির সড়কও সকালে ছিল অনেকটাই ফাঁকা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বনশ্রী, রামপুরা ও গুলশান-১ থেকে মহাখালী সড়কে কোনও পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি। এমনকি ট্রাফিক পুলিশও এসব এলাকায় দেখা যায়নি।

মহাখালীতে যাদের অফিস আছে, তারা জানিয়েছেন, বাস না পাওয়ায় হেঁটে তারা অফিসে এসেছেন। কেউ কেউ বাসস্ট্যান্ডে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বাস পেয়ে তাতে চড়ে এসেছেন।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মধ্য বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের নিচে শ্রমজীবী মানুষদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কথা হয় উজ্জ্বল হোসেন নামে একজনের সঙ্গে। তিনি জানান, এই আন্দোলনের জন্য কাজের চাহিদা কমে গেছে। জমানো টাকা ভেঙে খেতে হচ্ছে।

“আজকে এখন সাড়ে ৮টা বাজে এখনও কোনও কাজ পাইনি। সকাল ৭টা থেকে বসে আছি।”

কাজের সন্ধ্যানে মধ্য বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের নিচে ফুটপাতে বসে থাকতে দেখা যায় শ্রমজীবী দিনমজুরদের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

একই কথা পাশে থাকা সুমনের। তিনি বলেন, “কাজ পাচ্ছি না। দুপুর পর্যন্ত বসে থেকেও কাজ মিলছে না। এরপর আবার শুরু হবে গণ্ডগোল। আমাদের অবস্থা ভালো না।”

সকাল সাড় ১০টার আগে শাহবাগ মোড়ও অনেকটাই ফাঁকা ছিল। বেশ কিছু রিকশা চলাচল করতে দেখা গেলেও বাসের দেখা মেলেনি।

বিজয় সরণি-ফার্মগেট এলাকার সড়কে সকালে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা যায়। বাসের দেখা মেলেনি এই এলাকায়। বিজয় সরণি হয়ে ফার্মগেটমুখী একটি প্রাইভেটকার চোখে পড়লেও সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি।

শনির আখড়া এলাকার সড়কেও যানবাহনের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বরের রবিবার সকালে যানবাহন চলাচল ছিল খুবই সীমিত। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় সকাল ১১টার লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেলেও বিক্ষোভকারীদের দেখা মেলেনি।

অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও সড়কে রিকশার সংখ্যা ছিল বেশি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করলেও তার সংখ্যা ছিল বেশ কম। গোলচত্বর এলাকায় কিছু পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা গেছে।

এছাড়া শনির আখড়া এলাকার সড়কেও সকালে একেবারে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত