বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন দেশজুড়ে হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রায় একশ মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে জুলাইয়ে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির জন্য সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি তুলে রবিবার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।
একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রবিবার রাজপথে আওয়ামী লীগ নেতাদের জমায়েত ও সোমবার শোক মিছিলের কর্মসূচি দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচির শুরুর দিন রবিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজপথে নামার পর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে।
সকাল সন্ধ্যার নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক প্রতিবেদক ও বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে রবিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় প্রায় একশ মানুষ নিহত হয়েছে।
প্রথম আলো বলছে, সারাদেশে সংঘাতে অন্তত ৯৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৮ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১ জন, সাভারে ১ জন ও বরিশালে ১ জন নিহত হয়েছেন।
মানবজমিন বলছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৮৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকায় ৮ জন নিহত
প্রথম আলো জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এদিন রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১ জন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং ৩ জন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উত্তরায় সংঘর্ষে নিহত ১
ঢাকার উত্তরায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে আন্দোলনারীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২২ জন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকাল ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল।
গুলিবিদ্ধ ২২ জনের মধ্যে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৯ জন ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টার আগেই উত্তরার উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৮ নম্বর সেক্টর হয়ে আলাউল অ্যাভিনিউ সড়ক, জমজম টাওয়ার থেকে হাউজ বিল্ডিং এলাকায় হয়ে, আজমপুর রেলগেট থেকে বিএনএস সেন্টারের সামনের মহাসড়কে হাজারো শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। মহাসড়কে পুলিশ না থাকলেও উত্তরা পূর্ব থানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
উত্তরা পূর্ব থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়।
দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান আজমপুরের একটি ক্যাম্পে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ছিলেন সড়কে। পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
দুপুর ১টার দিকে হাউস বিল্ডিং থেকে জসীমউদ্দিন পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দখলে নেন বিক্ষোভকারীরা। এসময় আওয়ামী লীগের ক্যাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়। একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এসময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা এখনও সড়কে অবস্থন করছেন।
সাভারে নিহত ১
আশুলিয়ার বাইপাইলে রবিবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞাত (৩০) এক যুবক নিহত হয়েছে। বিপ্লব নামে ফুটপাতের এক পানি বিক্রেতাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আহত বিপ্লব সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি রাস্তার পাশে পানি বিক্রি করি। হঠাৎ করে মারামারি লাগছে। তখন একটা গুলি এসে আমার বুকে লাগে।”
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে মৃত অবস্থায় অজ্ঞাত ওই যুবকের মরদেহ রেখে যায় ৪-৫ জন তরুণ। মরদেহটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। তার পিঠে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া হাতে গুলিবিদ্ধ আরও একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে থানায় হামলা, নিহত ১৩ পুলিশ
দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র এ তথ্য দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে হাইওয়ে থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নরসিংদীতে ৬ আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, রবিবার দুপুর ১টার দিকে নরসিংদীর মাধবধী পৌর ভবনের পাশে বড় মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শহীদুল ইসলাম সোহাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদি ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মাধবধী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৩৭), মাধবধী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুজ্জামান ভূইয়া (৪৮), নরসিংদী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাইয়ের ছেলে ছাত্রলীগকর্মী দেলোয়ার হোসেন দেলু (৪৮), মাধবধী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনিসুর রহমান সোহেল (৪৩), আওয়ামী লীগ কর্মী কামাল মিয়া (৪৫) ও বাবুল হোসেন (৪৭)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে মাধবধীর বাসস্টেশন এলাকায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়। দুপুর ১২টার দিকে তারা পৌর ভবনের দিকে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়।
পরে, দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মাধবধী বাজার এলাকায় মসজিদের সামনে ৬ আওয়ামী লীগের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে যায় আন্দোলনকারীরা।
সিলেটে গুলিবিদ্ধ ৬ জনের মৃত্যু
সিলেটের গোলাপগঞ্জে রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, বিজিবি ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন নিহত হয়েছে।
রবিবার দুপুরে গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ বাজারে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সানি আহমদ (১৮), তাজ উদ্দিন (৪৩) ও নাজমুল ইসলাম (২২) নামে তিনজন।
একইদিন বিকাল ৫টার দিকে গোলাপগঞ্জ চৌমহনা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মিনহাজ আহমদ (২৬), হাসান আহমদ (১৫), গৌছ উদ্দিন (২৯) নামে আরও তিনজন। তাদের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক গৌছ উদ্দিন ও মিনহাজ আহমেদকে মৃত ঘোষণা করেন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাসান আহমদ।
নিহত মিনহাজের বড় ভাই সাঈদ আহমদ বলেন, “বিকালে ওয়ার্কশপ থেকে একটি হোটেলে ভাত খেতে বেরিয়েছিলেন মিনহাজ। সংঘর্ষের মধ্যে ওয়ার্কশপে ফিরতে গিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
এ ব্যাপারে রবিবার রাতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “গৌছ উদ্দিন ও মিনহাজ আহমদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় আর হাসান আহমদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।”
সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. সম্রাট তালুকদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গোলাপগঞ্জে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে কয়জন মারা গেছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন বলে তিনি জানান।
হবিগঞ্জে ১ যুবক নিহত
হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় রিপন শীল (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
নিহত রিপন শীল হবিগঞ্জ শহরের অনন্তপুর এলাকার রতন শীলের ছেলে।
রতনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাইম আশরাফ চৌধুরী।
সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ভাঙচুর করা হয়েছে হবিগঞ্জ- ৩ আসনের এমপি আবু জাহিরের বাসভবন। আগুন দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
রবিবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত শহরের থানার মোড় থেকে কালীবাড়ি ক্রসরোড এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শহরের বৃন্দাবন কলেজ রোড এলাকায় জড়ো হতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সেখানে অবস্থান নেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেয় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। মিছিল সহকারে তারা শহরের প্রধান সড়কে দিয়ে আসতে থাকেন। পথিমধ্যে হবিগঞ্জ সদর থানা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা।
পরে শহরের টাউন হল সড়কে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি কর্মী ও আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষ হয় টানা কয়েক ঘণ্টা। এতে গুলিবিদ্ধ ও টেটা (বল্লম) বিদ্ধ হয়ে অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হন ।
সংঘর্ষের সময় শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। ছোটাছুটি করতে গিয়েও আহত হন অনেক পথচারী। বন্ধ থাকে পুরো শহরের দোকানপাট।
বগুড়ায় নিহত ২
বগুড়ার সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
দুপচাচিয়ায় নিহতের নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। সদরে নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালনে সকাল ১০টার দিকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের দুপচাঁচিয়া উপজেলার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে তারা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করে। একটি পুলিশ বক্সও ভাঙচুর করা হয়। হামলা হরা হয় উপজেলা ভূমি অফিসসহ একাধিক সরকারি স্থাপনায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে পুলিশ থানার মধ্যে অবস্থান নেয়। তখন আন্দোলনকারীরা থানার গেইট ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এসময় থানার মধ্যে থেকে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হন মুনিরুল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান তিনি।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. শামসুন্নাহার জানান, মনিরুলের মাথায় গুলি লেগেছিল।
শজিমেক হাসপাতালের উপ পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সাড়ে ১২ টার দিকে আহত অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে নিয়ে আসা হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ সঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
পাবনায় নিহত ৩
ঢাকা পোস্ট জানিয়েছে, রবিবার দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া তত্ত্বাবধানে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি বর্ষণ করা করা হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী জাহিদু ইসলাম (১৯), মাহবুুবুল হোসেন (১৬), ফাহিম (১৭) নামের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীরা আব্দুল হামিদ সড়কে অবস্থান করছে।
রংপুরে নিহত ৪
রংপুর শহরে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত চারজন।
রবিবার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের একজন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারাধন রায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের মরদেহ রাস্তায় পড়ে ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রবিবার সকালে টাউন হলের সামনে অবস্থান নেন রংপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আর জাহাজ কম্পানি মোড়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জন। তাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও পরশুথানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারাধন রায় হারা এবং খসরুকে সংঘর্ষের সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, “সংঘর্ষের ঘটনায় হারাধন রায় ও খসরু নামের দুইজনের মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জেনেছি।”
মুন্সীগঞ্জে নিহত ২
বাংলাট্রিবিউন জানিয়েছে, সংঘর্ষের মাঝে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন দুই নির্মাণ শ্রমিক।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের হয়েছে। সেখানে গোলাগুলি ও মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় কাজে যাওয়ার পথে দুই নির্মাণ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এদিকে ত্রিমুখী সংঘর্ষে সাত জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন।
মাগুরায় নিহত ৪
মানবজমিন বলছে, মাগুরায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী নিহত হয়েছেন। এ সময় সংঘর্ষে ৪ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। রবিবার বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন রাব্বী।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, রাব্বি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়। এছাড়া চবি শিক্ষার্থী ফরহাদ ও কলেজ শিক্ষার্থী সুমন নামের একজন ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বরিশালে নিহত ১
টিবিএস জানিয়েছে, বরিশালে আন্দোলনকারীদের সাথে সংর্ঘর্ষে টুটুল চৌধুরী (৬০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক এএসএম সায়েম চৌধুরী।