পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের ‘নাটক সাজানো হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান ও বিহু উৎসব উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
দেবাশীষ রায় বলেন, “আমাদের অঞ্চলে পাতানো খেলা হয়। মাঝে মধ্যে কৃত্রিমভাবে সংঘাতের নাটক সাজানো হয়। এইসব নাটকের যদি অবসান না হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারে না।”
পাহাড়ে সংঘাতের ইতিহাস বহু দিনের। ১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছাড়লেও পাহাড়ে হানাহানির অবসান ঘটেনি।
সম্প্রতি সেখানে মাথাচাড়া দিয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে আরেকটি সংগঠন, যারা নিজেদের পাহাড়ে পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধি হিসাবে দাবি করে। কুকি-চিন পাহাড়ে চাকমা নৃগোষ্ঠীকে আধিপত্যশীল হিসাবে দেখে।
ব্যাংকে হামলার পর কুকি-চিনের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনীর অভিযানের মধ্যে সংঘাত নিয়ে চাকমা রাজার মন্তব্য এল।
দেবাশীষ বলেন, “জুম্ম, পাহাড়ি, আদিবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমরা মনে করি, মাথা নত করে থাকব না। আমাদের যেমন বঞ্চনা রয়েছে, আবার আশার কথাও বলতে হবে। আমরা অবশ্যই যারা বঞ্চিত তাদের পাশে দাঁড়াব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলব। কিন্তু আমাদের আশার বাণীও শোনাতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম শক্তি-উদ্যম নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।”
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান ও বিহু উৎসব-২০২৪ উপলক্ষে বুধবার সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বরে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান।
উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, নারী অধিকারকর্মী আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা প্রমুখ।
সভায় ঊষাতন তালুকদার বলেন, “পার্বত্যবাসী জুম্মরা বাংলাদেশের শত্রু নয়, বাংলাদেশের পথের কাঁটা নয়। বাংলাদেশের এই আদিবাসীরা বরং বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে। বাংলাদেশের মান সম্মান বাহির থেকে নিয়ে আসে। আগামী বছর আমরা আরও মন-প্রাণ খুলে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু উদযাপন করতে পারব সেই প্রত্যাশা করছি।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে পাহাড়ি বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের পরিবেশনায় ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন পাহাড়ি তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ।
রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়। এবারের অনুষ্ঠানের স্লোগান ‘জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অধিকতরভাবে এগিয়ে আসুন’।