দিনভর ঢাকা শহরের অলিগলিতে জমা হয়েছে কোরবানির পশুর বর্জ্য। সেই বর্জ্য অপসারণে আগেই সময় ঠিক করে দিয়েছেল দুই সিটি করপোরেশন। সেই অনুযায়ী, সকাল থেকেই কাজ করতে দেখা যায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মীদের।
বিভিন্ন স্থান থেকে প্রথমে ছোট ভ্যানে করে বর্জ্য সরিয়ে একেক এলাকায় জড়ো করা হয়। এরপর বিশেষ ট্রাকে সেগুলো সরিয়ে নেয় সিটি করপোরেশন। পরিচ্ছন্নতার এই কাজে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলেছে দুই সিটির। রাতের মধ্যেই ‘ক্লিন ঢাকা’র আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
পশু কোরবানির পর সোমবার বেলা ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয় প্রতিটি ওয়ার্ডে। আগে থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা না মেনেই বেশিরভাগ মানুষই পশু কোরবানি দিয়েছেন বাড়ির সামনে ফাঁকা রাস্তা বা ফুটপাতে। আর মাংস কাটা-বাটোয়োরার কাজ চলেছে ভবনের বেইজমেন্ট কিংবা গ্যারেজে। এরপর বর্জ্য জমা করা হয়েছে বাসার সামনে অথবা রাস্তার ধারে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা যেখানেই বর্জ্য পাচ্ছেন, সেখান থেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন। কথা কাটাকাটিও হচ্ছে অনেক সময় ভবন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও কর্মী নিয়োজিত করার পাশাপাশি বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে দুই সিটিই।
নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে এবার হাল ছেড়ে দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দেখা গেছে প্রায় সবাই কোরবানি দিয়েছেন বাড়ির সামনে। বড় সড়ক ছাড়াও অলিগলি থেকে পশুর গোবর, জবাই কাজে ব্যবহৃত পাটি, হাটের খড়কুটো, হাড়, ঘাসপাতা ও অন্যান্য বর্জ্য জমা হয় বিস্তর।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম দুপুরে মিরপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এক নম্বর ফটকের উল্টোদিকে বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, “এখানে আমরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির উদ্যোগ নিয়েছি, ফলে এখানে ১২০০ পশু কোরবানি হয়েছে, ঝামেলা ছাড়াই। সবাই একসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দিলে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমটা অনেক সহজ হয়।
“যে ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট স্থানে বেশি সংখ্যক পশু কোরবানি হবে সেই ওয়ার্ডে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ডিএনসিসির ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছেন বলে জানান মেয়র। মাঠে আছেন ডিএনসিসির সব কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারাও।
বর্জ্য অপসারণ কাজে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে মেয়র আতিক বলেন, “যদি আজকের মধ্যে নিতান্তই সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই আগামীকাল সকালের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করুন। তাহলে আমরা দ্রুত শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে পারব। এখন অনেক গরম, আবার বৃষ্টিও হচ্ছে। এই সময়ে এইডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।”
দেশের বাইরে অবস্থান করায় দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হল থেকে পরিচালিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন বর্জ্য অপসারণ কাজের।
তিনি বলেন, “আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আশা করা হচ্ছে, এর অনেক আগেই কাজ শেষ হবে।”
ঢাকার দুই সিটিতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজে সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১০ হাজার ২৫৭ জন, উত্তরে ৯ হাজার ৩৩৭ কর্মী। এর বাইরেও কিছু কর্মী নেয়া হয়েছে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে।
ঢাকায় কোরবানি করা পশু এবং কোরবানির হাট মিলিয়ে অন্তত ৩৯ হাজার টন বর্জ্য হবে বলে ধরে নিয়েছে দুই সিটি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ১১৫টি ডাম্প ট্রাক, ১৪০টি পিক-আপ, ১২৯টি কমপেক্টরসহ ৫২০টি বিশেষায়িত যান কাজ করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্জ্য অপসারণে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ১৫০টি মিনি ট্রাক, ৪৬টি কম্পেক্টর এবং ৪৭টি পে লোডারসহ ৫৬০টি যান নিয়োজিত রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় রবিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে পশুর হাটের বর্জ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। ঈদের দিনও সকালেও হাটের বর্জ্য অপসারণ করা হয়। পরে দুপুরে শুরু করা হয় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম।