নিবন্ধনের মেয়াদ ফুরিয়েছে অন্তত চার বছর আগে। ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। কিন্তু চিকিৎসাসেবার সব কার্যক্রমই চলছিল পুরোদমে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বগুড়া শহরে একটি ব্লাড ব্যাংক ও দুইটি বেসরকারি ক্লিনিক সিলগালা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একইসঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মোট সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের খবর পেয়ে রোগী রেখে পালিয়ে যায় একটি ক্লিনিকের লোকজন।
রবিবার বিকালে বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় যৌথভাবে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে একটি ক্লিনিক থেকে দুই রোগীকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জানা যায়, শহরের কানছগাড়ী এলাকার শতদল কমিউনিটি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ এবং মা ফাতেমা ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিককে দুই লাখ টাকা এবং শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার সেবা ব্লাড ব্যাংককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী। পরে তিনটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার সাজ্জাদ উল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রথমে ঠনঠনিয়া এলাকার সেবা ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০২০ সালের পর তাদের কোনও কাগজ নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া তারা কোনও রকম মেয়াদের তারিখ ছাড়াই রক্ত সংরক্ষণ করেন। এমন দশ ব্যাগ রক্ত সেখানে ছিল। এ জন্য তাদের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার আব্দুল হামিদ এই টাকা পরিশোধ করেন।
সাজ্জাদ জানান, পরে কানছগাড়ী এলাকার মা ফাতেমা ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ডাক্তার ও নার্স আগেই পালিয়ে গেছেন। সেখানে খোঁজ নিয়ে দুজন রোগী পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ক্লিনিকের মালিক আমিনুল ইসলামের স্ত্রী বুবলী খাতুন কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলেও বৈধ কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ক্লিনিকটির অপারেশন থিয়েটারের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর পাওয়া যায়। এ প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর দুই রোগীকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রোগী রেখে চিকিৎসক ও নার্সদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বুবলী খাতুন বলেন, “আমার স্বামী এই ক্লিনিক পরিচালনা করে। অভিযান চালানোর খবর পাওয়ার পর তিনি (স্বামী) না থাকায় আমি কাগজপত্র নিয়ে এসেছি। ডাক্তার-নার্স কেন পালিয়ে গেলেন সেটা তো আমি বলতে পারব না। হয়তো ভয়ে তারা পালিয়ে গেছেন।”
মা ফাতেমা ক্লিনিকে চারদিন আগে স্ত্রী বেবি বেগমকে ভর্তি করিয়েছিলেন আদমদীঘি উপজেলার সান্দিরা গ্রামের আব্বাস আলী। তিনি বলেন, “আমরা তো ভালো শুনেই এখানে এসেছিলাম। আমার স্ত্রীর অপারেশনও ভালো করেছেন ডাক্তার। কিন্তু হাসপাতালের অনুমোদন নাই এটা আমরা কীভাবে জানব? আজকে হঠাৎ করে আমাদের দরজা লাগিয়ে সব চলে গেছে। এমন সময়ে রোগীর যদি কিছু হতো তাহলে দায়ভার কে নিত?”
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে শতদল ক্লিনিকেও একই অবস্থা পাওয়া যায় জানিয়ে সাজ্জাদ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের মালিক আলমগীর হোসেনকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক।
বগুড়ায় প্রায় ৫০০ বেসরকারি ক্লিনিক আছে জানিয়ে সাজ্জাদ বলেন, “আমরা পর্যায়ক্রমে সবগুলো পরিদর্শন করে অসঙ্গতি খতিয়ে দেখব।”