আর মাত্র একদিনের অপেক্ষা। আগামীকাল বুধবারই সেই অপেক্ষার অবসান হবে প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে। এরপরই তারা কর্মস্থলে যোগ দেবেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে। এখন সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছেন সবাই।
বলছি ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণরত এসআইদের কথা। আগামীকাল বুধবার রাজশাহীর সরদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে তাদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তার আগে আজ মঙ্গলবার প্রশিক্ষণ শেষ করা এসআইদের আনুষ্ঠানিকভাবে র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর এই ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজের সময় নির্ধারিত ছিল। তবে সেসময় তা বাতিল করা হয়।
৪০তম ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে সারদার পুলিশ একডেমি যখন বিভিন্ন রঙের ব্যানার আর ফেস্টুনে সেজে উঠেছে, তখন একই ব্যাচ থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা ঢাকায় সচিবালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
গতকাল সোমবার বিকাল ৩টার দিকে তাদের এই অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
কারা, কেন অনশনে
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০২৩ সালে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে নিয়োগের জন্য ৮২৩ জনকে চূড়ান্ত করে তাদের পাঠানো হয় সারদার পুলিশ একাডেমিতে। ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করে গত নভেম্বর মাসেই তাদের চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসআই পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএনপি। আওয়ামী লীগ আমলে দলীয় বিবেচনায় এই নিয়োগ হয়েছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানায় দলটি।
বিএনপি এই দাবি তোলার পাঁচ দিন পর গত ২১ অকেটাবর শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে একযোগে ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে একযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েক ধাপে মোট ৩২১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাচের আরও ২২ জনের কাউকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কেউ অব্যাহতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সবশেষে ৪৮০ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআই হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন।
অব্যাহতিপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে নাশতা না খেয়ে প্রশিক্ষণ মাঠে হইচই করা, ক্লাসে কথা বলা, হইচই করা, প্রশিক্ষণ চলাকালে অমনোযোগী থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অব্যাহতিপ্রাপ্তরা। অব্যাহতি পাওয়া সেই এসআইরাই চাকরি পুনর্বহাল দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
কী বলছেন অনশনকারীরা
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সুবীর রায় সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে আমাদের প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও জায়গাতেই আমাদের সঙ্গে হওয়া এই অন্যায়ের প্রতিকার পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়েই অনশনে বসা। আমাদের অনুরোধ মিথ্যা অভিযোগে আমাদের জীবনটা এভাবে ধ্বংস করবেন না। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেন”
সরকারের সিদ্ধান্ত জানার আগ পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আরেক এসআই দীপিকা চক্রবতী বলেন, “শিক্ষাজীবনের কোনও পর্যায়েই আমি কখনও কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও আমি কোনও অনৈতিক উপায় অবলম্বন করিনি।
“কারও সুপারিশ বা অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেনও করিনি। সম্পূর্ণ নিজের মেধায় চাকরি পেয়েছিলাম আমি। আমাদের গ্রামের প্রথম লেডি সাব-ইন্সপেক্টর হতে চলেছিলাম। কিন্তু মিথ্যা একটা অভিযোগের কারণে নিভে গেল আমার সব আশা। আমি এই অন্যায়ের প্রতিকার চাই।”
অনশনরতদের আরেকজন মো. তারেক বলেন, “অনশন শুরু করার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া পাইনি আমরা। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আগ পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালন করব আমরা।”
প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাজ্জাদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা গতকাল থেকে অনশন করছি। তীব্র শীতের মধ্যে সারা রাত সড়কেই পড়ে ছিলাম। কিন্তু এরপরও যেন আমরা কারও চোখে পড়ছি না। আমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবছে না।”
সারদায় কী হচ্ছে
রাজশাহীর সরদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের এসআইদের সমপনী কুচকাওয়াজ বুধবার। তার আগে আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণরত এসআইদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
র্যাংক ব্যাজ পেয়ে খুশিতে উল্লাস করতে দেখা গেছে নতুন এসআইদের। অনেকেই হাসিমুখে ভি চিহ্ন দেখিয়ে উদযাপন করছেন নিজের অর্জন।
র্যাক ব্যাজ পাওয়া এক প্রশিক্ষণার্থী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এক বছরের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে আজকের এই অর্জনে অনেক খুশি আমি। কিন্তু এরপরও মনটা খারাপ।
“একসঙ্গে দীর্ঘদিন যাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ করেছি, শেষ মূহুর্তে এসে তাদের অনেকেই বাদ পড়েছেন। সবাই একসঙ্গে উদযাপন করতে পারলে আনন্দটা আরও বেশি হতো।”
তিনি বলেন, “বুধবার সকালে কুজকাওয়াজ শেষে আমাদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে রওনা হবো আমরা। দোয়া করবেন নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে দেশ ও মানুষকে সেবা দিতে পারি যেন।”
পুলিশ কী বলছে
বুধবার সমাপনী কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে ৪০তম ক্যাডেট এসআইদের প্রশিক্ষণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর সপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) ইনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, এই ব্যাচ থেকে ৪৮০ জন এসআই নিয়োগ পাচ্ছেন।
একই ব্যাচ থেকে অব্যাহতি পেয়ে অনশন কর্মসূচি পালন করা প্রশিক্ষণার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
তবে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি পদ মর্যাদার আরেক কর্মকর্তা নাম না প্রকোশের অনুরোধ জানিয়ে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অব্যাহতিপ্রাপ্তদের বিষয়ে পুলিশ বাহিনীর আর কিছু করার নেই। এখন তাদের বিষয় দেখবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আদালত।”